বামরাইলের মাটি বিএনপির ঘাঁটি, জিয়া আমিন রাড়ীর প্রত্যাবর্তনে গর্জে উঠলো বরিশাল

- প্রকাশের সময়: ০৬:১০:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ ১৮২ জন পড়েছে
দীর্ঘ একযুগ পরে নিজ জন্মভূমি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইলে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় দীর্ঘ ১২ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানো বিএনপির ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা মোঃ জিয়া আমিন রাড়ী। শনিবার (২২ জুন) সকাল ১১টায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে বামরাইল ইউনিয়নের মাটি স্পর্শ করেন এই নেতা। তার এই প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে গোটা বামরাইল পরিণত হয় উৎসবমুখর এক জনসমুদ্রে।
তাকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই বামরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড, পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন ও উপজেলার হাজার হাজার নেতাকর্মী ছোট ছোট মিছিল নিয়ে উপস্থিত হন। রাস্তার দুই পাশে, বাজারের মোড়ে মোড়ে, বিদ্যালয় মাঠে ছিল মানুষের ভিড় আর ‘বামরাইলের গর্ব’, ‘বিএনপির ঘাঁটি’—এমন গগনবিদারী স্লোগান।
জিয়া আমিন রাড়ীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বামরাইল অনাথ বন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বামরাইল ইউনিয়ন বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে এক বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে সকাল থেকেই উপস্থিত হন বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ। তাদের হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন, শহীদ জিয়ার প্রতিকৃতি এবং ফুলের তোড়া।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বামরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন যগ্লু এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাফিজুর রহমান শাহিন সিকদার। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মোঃ জিয়া আমিন রাড়ী। তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আমি ফিরে এসেছি শুধুমাত্র মাটি ও জন্মভূমির টানে নয়, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে। আমি দেশ ছাড়িনি আনন্দে, আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। আজ এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি সেই শপথ করছি—এই জনস্রোতের মাঝে থেকে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো ইনশাআল্লাহ। প্রয়োজনে আবার দেশ ছাড়বো, মামলা খাবো-তারপরেও ভারতের সাথে কোন আপোষ নেই।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, সাবেক উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি, সাবেক উপজেলা যুবদলের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সভাপতি সরদার সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, “জিয়া আমিন রাড়ী শুধু একজন নেতা নন, তিনি বরিশালের বিএনপির ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতীক। দীর্ঘ সময় ধরে নির্যাতিত হয়ে বিদেশে আশ্রিত থেকেছেন। আজ তিনি ফিরে এসেছেন আন্দোলনের পথে। এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে দেয়, বরিশালের মাটি এখনো শহীদ জিয়ার সৈনিকদের হাতে শক্ত।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অংশ নেন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এএফএম সামসুদ্দোহা আজাদ, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মোঃ শাহাবুদ্দিন আকন সাবু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান লিখন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ ইউসুফ হোসেন, বামরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও প্রভাষক আঃ হালিম হাওলাদার এবং বামরাইল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ মেহেদী হাসান ডিটু।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ সোহেল দেওয়ান, উপজেলা শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আলম রাড়ী, বামরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ নুরে আলম জোমাদ্দার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম রাড়ী, বামরাইল ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মোঃ মহসিন সরদার, বামরাইল ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মোঃ সবুজ সরদার এবং জিয়া আমিন রাড়ীর চাচা মিজানুর রহমান রাড়ী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উজিরপুর উপজেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি ও উজিরপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাদুজ্জামান কমরেড, বামরাইল ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সপন ফকির, বামরাইল ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান মনির, বামরাইল ইউনিয়ন যুবদল নেতা মোঃ মাসুম ফকির, বামরাইল ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ খলিল, কালিহাতা ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ মাসুদ হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনিচ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহেব আলী মৃধা এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ চুন্নু ফকির।
দিনব্যাপী বামরাইল এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। নেতাকর্মীদের খণ্ড খণ্ড মিছিল, গাড়িবহর, বাইক শোভাযাত্রা আর পতাকায় ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে গণজোয়ার। সেই সঙ্গে গর্জে ওঠে শ্লোগান—“এক জিয়া লোকান্তরে লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে”, “শহীদ জিয়ার সৈনিক রাজপথে ফিরেছে”, “বামরাইলের মাটি, বিএনপির ঘাঁটি”।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর দলের একজন নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতার ফিরে আসা বিএনপির স্থানীয় সংগঠনকে নতুন শক্তি ও উদ্দীপনা দেবে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত এই বার্তা পৌঁছে যাবে যে, বিএনপি এখনও সংগঠিত, ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত, এবং রাজপথে ফেরার জন্য প্রস্তুত।