উজিরপুরে ইউএনও মোঃ আলী সুজার নেতৃত্বে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে ত্রিমুখী কর্মসূচি সম্পন্ন

- প্রকাশের সময়: ০২:৪৭:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫ ১৭২ জন পড়েছে
“শিক্ষা শুধু পরীক্ষার ফল নয়, এটি একটি প্রজন্ম গড়ার নির্মাণ প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়াকে শুদ্ধ ও গুণগত করতে হলে আমাদের প্রতিটি স্তরে একসাথে কাজ করতে হবে”-এমনই শক্ত বার্তা দিয়েছেন উজিরপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জনাব মোঃ আলী সুজা।
৪ আগস্ট ২০২৫, সোমবার, উজিরপুর উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে একদিনে অনুষ্ঠিত হলো তিনটি শিক্ষামূলক কর্মসূচি। প্রতিটি আয়োজনেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইউএনও তুলে ধরেন শিক্ষার মৌলিক দিক, সামাজিক চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয়।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সচেতনতাই মূল হাতিয়ার
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ বিরোধী সচেতনতামূলক সমাবেশ। ইউএনও বলেন, “আমরা যখন দেখি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা সামাজিক সহিংসতায় জড়িয়ে যায়, তখন বুঝতে পারি কোথাও আমাদের অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রশাসনের সম্মিলিত দায়িত্বে ঘাটতি ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু আইন প্রয়োগ নয়, শিশুদের মনোজগতে সচেতনতার বীজ বপন করতে না পারলে আমরা হারাবো ভবিষ্যতের নির্মাতা প্রজন্মকে।”
কর্মমুখী শিক্ষাই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি
পরবর্তী পর্বে ছিল কারিগরি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণ সভা। ইউএনও আলী সুজা বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের সন্তানরা যদি কেবল পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তারা চাকরি খুঁজবে; কিন্তু কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে না। কারিগরি শিক্ষা হল আত্মনির্ভরতার সোপান।”
তিনি অভিভাবকদের অনুরোধ করেন, সন্তানদের ভবিষ্যৎ ভাবনায় কেবল জিপিএ নয়, বাস্তব দক্ষতার বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিতে।

ফল বিশ্লেষণই উন্নয়নের সূচনা
তৃতীয় ও শেষ কর্মসূচিতে ইউএনও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, “২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের প্রত্যাশিত ফলাফল হয়নি-এর দায় কার?” এই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে ফল বিশ্লেষণ ও ২০২৬ সালের জন্য রূপরেখা নির্ধারণ।
তিনি বলেন, “সমস্যা চিহ্নিত না করলে সমাধান কখনো সম্ভব নয়। আমরা চাই প্রতিটি স্কুল নিজের অবস্থান বিশ্লেষণ করুক, যেখানে ঘাটতি ছিল, সেখানে পূর্ণতা আনুক।”
শিক্ষকদের ভূমিকার প্রতি আন্তরিক সম্মান
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অধ্যক্ষরা। ইউএনও তাঁদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আপনারা হচ্ছেন জাতির কারিগর। আপনাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে সেই প্রচেষ্টা হতে হবে যুগোপযোগী, ফলপ্রসূ ও শিক্ষার্থীবান্ধব।”
সাংবাদিক সমাজের ভূমিকাকেও কৃতজ্ঞতা
তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনারাই সমাজের আয়না। আপনারা যদি শিক্ষার ইতিবাচক পরিবর্তন তুলে ধরেন, তাহলে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়বে আরও দ্রুত।”
সম্মিলিত অঙ্গীকারই ভবিষ্যতের ভিত্তি
শেষ পর্যায়ে ইউএনও বলেন, “আজকের এই ত্রিমুখী আয়োজন একটি যৌথ অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ। এখানে শিক্ষক, প্রশাসন, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা এক কণ্ঠে বলেছে-আমরা শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করব।”

সভাপতিত্বে শিক্ষা অফিসার, সঞ্চালনায় প্রাণবন্ত আলোচনা
সমগ্র আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ.বি.এম. জাহিদ। তিনিও তাঁর বক্তব্যে বলেন, “গুণগত শিক্ষা শুধু সংখ্যাগত নয়-এই উপলব্ধি থেকেই আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।”
বক্তব্যে প্রাণবন্ত ছিলেন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার বিভিন্ন শিক্ষক, বিশেষ করে সরকারি ডব্লিউ বি ইউনিয়ন মডেল ইনস্টিটিউট এর প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ আলম, দোসতিনা আহ: ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ সিদ্দিক উল্লাহ, হাবিবপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান, বড়াকোঠা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষিকা মারুফা খানম বিউটি, জয়শ্রী মুণ্ডপাসা এসএ বিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেকেন্দার আলী, হারতা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বানীকান্ত হালদারসহ অন্যান্যরা।
এছাড়াও এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উজিরপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক কাওছার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম আসাদ ও সদস্য মোঃ খলিলুর রহমান এবং সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মাসুম সহ উপজেলার ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ ও ছাত্র-ছাত্রীরা।
এই ত্রিমুখী অনুষ্ঠান প্রমাণ করে, উজিরপুর কেবল পরিকল্পনায় নয়, বাস্তবায়নেও গুরুত্ব সীমাহীন। ইউএনও মোঃ আলী সুজার এমন বিশ্লেষণভিত্তিক, দিকনির্দেশনামূলক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির নেতৃত্বে উজিরপুরের শিক্ষাব্যবস্থা যে আরও বলিষ্ঠ হয়ে উঠবে-তা বলাই যায়।