উজিরপুরে মাদকের বলি হলো পিতা: ছেলের হাতে নৃশংস খুন

- প্রকাশের সময়: ০৪:০৯:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ ৮৪ জন পড়েছে
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের খাটিয়ালপাড়ায় মাদকাসক্ত ছেলের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন তার বৃদ্ধ পিতা। রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটে, যা পুরো এলাকায় শোক এবং চরম ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। নিহত শাহ আলম খান (৬৭) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ছিলেন। তার একমাত্র ছেলে শিমুল খান (২৮) দীর্ঘদিন ধরে মাদকে আসক্ত ছিলেন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন দুপুরে শিমুল তার বাবার কাছে মাদক কেনার জন্য টাকা দাবি করে। কিন্তু পিতা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাকে ধমক দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর শিমুল তার বাবাকে ডেকে ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। ঘরের সামনের পাকা রাস্তায় পৌঁছাতেই শিমুল পকেট থেকে ছুরি বের করে বাবার গলায় সজোরে আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় শাহ আলম খান ঘটনাস্থলেই মারা যান।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফারুক মৃধা জানান, “শিমুল আগেও একাধিকবার মাদকাসক্ত অবস্থায় পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এবার সে যা করলো, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।” হত্যাকাণ্ডের পর পালানোর চেষ্টা করে শিমুল। তবে আশপাশের লোকজন তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং উত্তেজিত জনতা তাকে মারধরের পর গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে।
এ বিষয়ে উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি যে, শিমুল তার বাবাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
এলাকাবাসী জানান, শিমুলের মাদকাসক্তির কারণে পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিল। এলাকার অনেকেই বারবার তার পরিবারের পাশে দাঁড়ালেও কোনো ফল আসেনি। তার আচরণ দিন দিন সহিংস হয়ে উঠছিল। অনেকে বলছেন, সমাজে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার প্রতিরোধে প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবার ও কমিউনিটিকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
এই ঘটনাটি কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়-এটি সমাজের এক ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। যখন একজন সন্তান নেশার টানে নিজের বাবাকে হত্যা করতে পারে, তখন তা গোটা সমাজ ব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুব সমাজকে বাঁচাতে হলে এখনই মাদকবিরোধী কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে, বাড়াতে হবে জনসচেতনতা, আর প্রয়োজন কার্যকর পুনর্বাসন ব্যবস্থাও।