উজিরপুরে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে কয়েল ফ্যাক্টরির কার্যক্রম স্থগিত

- প্রকাশের সময়: ০৭:৩৬:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৪২৫ জন পড়েছে
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম কেশবকাঠী (হাবিবপুর) গ্রামে বসতবাড়ির ভেতরে স্থাপিত একটি মশার কয়েল তৈরির ফ্যাক্টরি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িছে। এ ব্যপারে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ফ্যাক্টরির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে।
অভিযোগে বলা হয়, মশাং সাকিনের বাসিন্দা মোঃ নয়ন, পিতা মোঃ জামাল, বসতবাড়ির ভেতর মশার কয়েল তৈরির একটি কারখানা নির্মাণ শুরু করেন। ফ্যাক্টরি থেকে কালো ধোঁয়া, দুর্গন্ধ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত আশংঙ্কা করেন আশ-পাশের বসবাসকারী শতাধিক বাসিন্দা। এতে করে ভবিষ্যতে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট এবং আশেপাশে বসবাসকারী মানুষের চোখে জ্বালা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
এছাড়া এলাকাবাসীর আশঙ্কা, ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত ছাই ও রাসায়নিক বর্জ আশেপাশের কৃষিজমি ও পুকুরে ছড়িয়ে পড়লে খাদ্যশস্য ও মাছ উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখি ও সামগ্রিক পরিবেশও হুমকির মুখে পড়বে।
২৭ আগস্ট এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয়। আবেদনপত্রে ফ্যাক্টরিটি অবিলম্বে বন্ধ করা, আবাসিক এলাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া এবং পরিবেশ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। আবেদনে অনুলিপি প্রেরণ করা হয় ওটরা ইউনিয়ন পরিষদ, ফায়ার সার্ভিস, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল কার্যালয়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ০২ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলী সুজা’র নেতৃত্বে ভূমি কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ফ্যাক্টরির কার্যক্রম আগামী ১ সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে কারখানার মালিককে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে বৈধতা প্রমাণ করার জন্য এ সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
ইউএনও মোঃ আলী সুজা বলেন, “জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। ফ্যাক্টরিটি বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে না পারলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
অন্যদিকে, এলাকাবাসী প্রশাসনের এই পদক্ষেপে স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, বেশ কছিুদিন ধরে নির্মিত এই অবৈধ ও ক্ষতিকর কারখানা স্থাপন নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। অবশেষে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তারা আশ্বস্ত হতে পেরেছেন। তাদের দাবি, যেন ভবিষ্যতে আবাসিক এলাকায় পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান অনুমতি ছাড়া গড়ে উঠতে না পারে।
এছাড়া এলাকার বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, কয়েল ফ্যাক্টরি বা এ ধরনের কারখানা স্থাপন করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। আইন অমান্য করে কারখানা চালালে তা শুধু পরিবেশ নয়, স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রাকেও হুমকির মুখে ফেলবে।
প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও এলাকাবাসীর সতর্ক দৃষ্টির কারণে আপাতত উজিরপুরে বসতবাড়ির মধ্যে ক্ষতিকর কয়েল ফ্যাক্টরির কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও, এটি স্থায়ী সমাধান হবে কিনা তা নির্ভর করছে কারখানা মালিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শন ও পরিবেশবান্ধব নীতি মেনে চলার ওপর।