ঢাকা ১০:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উত্তর সাতলায় ৩০০০ মণ মাছ অবমুক্ত: স্বপ্নের ঘের হবে সাফল্যের বাজনা

নুরল ইসলাম আসাদ (জ্যেষ্ঠো প্রতিবেদক)
  • প্রকাশের সময়: ১২:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ ৬১ জন পড়েছে

মাছ নয়, স্বপ্নের চাষ হচ্ছে উত্তর সাতলার সততা মৎস ঘেরে

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার উত্তর সাতলায় ‘সত্যতা মৎস্য প্রকল্প’ বর্তমানে দেশের অন্যতম বড় জন-গণভিত্তিক মাছচাষ উদ্যোগ হিসেবে নজর কাড়ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল। স্থানীয় জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং ধারাবাহিক অগ্রগতির মাধ্যমে প্রকল্পটি দ্রুতই একটি সফলতার রোল মডেলে পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাভূমিকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই বৃহৎ মৎস্য প্রকল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একে-অপরের প্রতি অগাধ আস্থা, জনসম্পৃক্ততা ও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতামূলক চেতনা।

প্রকল্পটির প্রথম ধাপে মাছ অবমুক্তকরণ কার্যক্রম আজ ২৩ মে ২০২৫, শনিবার সকালে সম্পূর্ণ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ঘেরে মোট ২৭৭০ মণ মাছ অবমুক্ত করা হয়েছিল। আজ সকাল ১১টার দিকে আরও প্রায় ৩০০ মণ মাছ অবমুক্ত করার মাধ্যমে মোট ৩০০০ মণ মাছ অবমুক্ত সম্পন্ন হয়। এই কর্মযজ্ঞে স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, এটাই ছিল প্রথম ধাপের লক্ষ্যমাত্রা এবং এটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তারা দারুণ আশাবাদী।

প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে আরও ৩০০০ মণ মাছ অবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এর আগে ঘেরটির সামগ্রিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঘের পরিষ্কার করা, ময়লা-আবর্জনা ও পচা কচুরিপানা সরানো, মাটিতে থাকা প্রাকৃতিক ছিদ্রগুলো বন্ধ করা, পর্যাপ্ত চুন প্রয়োগ, মাছের স্বাস্থ্যসচেতন খাবার নিশ্চিত করা এবং রোগ প্রতিরোধে সজাগ থাকা। এসব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরই দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে।

ঘেরটির সভাপতি বলেন, “এই প্রকল্প শুধু মাছচাষ না, এটা আমাদের স্বপ্নের অংশ। আমরা সবাই মিলে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। এবং এলাকাবাসী তথা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা বিএনপি’র উর্দ্ধোতন নের্তৃবৃন্দদের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।”

ঘের সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা জানান, “এই উদ্যোগে কারও প্রতি কারো, কোনো প্রকার বৈষম্য নেই। আমরা সবাই সমানভাবে সুযোগ পাচ্ছি, কাজ করছি, সময় আসলে লাভও সমানভাবে ভাগাভাগি করে নিবো।”

এভাবেই মৎস প্রকল্পটি হয়ে উঠেছে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ অর্থনৈতিক মডেল, যেখানে লাভের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধও প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বলেন, “আমার জীবনে এমন মাছচাষের উদ্যোগ এই এলাকায় আগে কখনও দেখি নাই। আমাদের ছেলেরা মিলে যা করছে, এটা গর্বের বিষয়। এলাকার শ্রমিকদের একটা অংশ এখানেই আয় করতে পারছে।”

প্রকল্পটির সফলতা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক দিক থেকেও অনন্য। এটি স্থানীয় মানুষের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে, যুবসমাজকে কর্মমুখী করেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরিয়েছে। এক সময়ের অবহেলিত এবং বেদখলীয় জলাভূমি আজ সম্ভাবনার এক উর্বর ক্ষেত্র। এই প্রকল্প ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও একটি প্রেরণা হয়ে থাকবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন।

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

উত্তর সাতলায় ৩০০০ মণ মাছ অবমুক্ত: স্বপ্নের ঘের হবে সাফল্যের বাজনা

প্রকাশের সময়: ১২:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার উত্তর সাতলায় ‘সত্যতা মৎস্য প্রকল্প’ বর্তমানে দেশের অন্যতম বড় জন-গণভিত্তিক মাছচাষ উদ্যোগ হিসেবে নজর কাড়ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল। স্থানীয় জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং ধারাবাহিক অগ্রগতির মাধ্যমে প্রকল্পটি দ্রুতই একটি সফলতার রোল মডেলে পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাভূমিকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই বৃহৎ মৎস্য প্রকল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একে-অপরের প্রতি অগাধ আস্থা, জনসম্পৃক্ততা ও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতামূলক চেতনা।

প্রকল্পটির প্রথম ধাপে মাছ অবমুক্তকরণ কার্যক্রম আজ ২৩ মে ২০২৫, শনিবার সকালে সম্পূর্ণ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ঘেরে মোট ২৭৭০ মণ মাছ অবমুক্ত করা হয়েছিল। আজ সকাল ১১টার দিকে আরও প্রায় ৩০০ মণ মাছ অবমুক্ত করার মাধ্যমে মোট ৩০০০ মণ মাছ অবমুক্ত সম্পন্ন হয়। এই কর্মযজ্ঞে স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, এটাই ছিল প্রথম ধাপের লক্ষ্যমাত্রা এবং এটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তারা দারুণ আশাবাদী।

প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে আরও ৩০০০ মণ মাছ অবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এর আগে ঘেরটির সামগ্রিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঘের পরিষ্কার করা, ময়লা-আবর্জনা ও পচা কচুরিপানা সরানো, মাটিতে থাকা প্রাকৃতিক ছিদ্রগুলো বন্ধ করা, পর্যাপ্ত চুন প্রয়োগ, মাছের স্বাস্থ্যসচেতন খাবার নিশ্চিত করা এবং রোগ প্রতিরোধে সজাগ থাকা। এসব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরই দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে।

ঘেরটির সভাপতি বলেন, “এই প্রকল্প শুধু মাছচাষ না, এটা আমাদের স্বপ্নের অংশ। আমরা সবাই মিলে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। এবং এলাকাবাসী তথা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা বিএনপি’র উর্দ্ধোতন নের্তৃবৃন্দদের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।”

ঘের সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা জানান, “এই উদ্যোগে কারও প্রতি কারো, কোনো প্রকার বৈষম্য নেই। আমরা সবাই সমানভাবে সুযোগ পাচ্ছি, কাজ করছি, সময় আসলে লাভও সমানভাবে ভাগাভাগি করে নিবো।”

এভাবেই মৎস প্রকল্পটি হয়ে উঠেছে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ অর্থনৈতিক মডেল, যেখানে লাভের পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধও প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বলেন, “আমার জীবনে এমন মাছচাষের উদ্যোগ এই এলাকায় আগে কখনও দেখি নাই। আমাদের ছেলেরা মিলে যা করছে, এটা গর্বের বিষয়। এলাকার শ্রমিকদের একটা অংশ এখানেই আয় করতে পারছে।”

প্রকল্পটির সফলতা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক দিক থেকেও অনন্য। এটি স্থানীয় মানুষের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে, যুবসমাজকে কর্মমুখী করেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরিয়েছে। এক সময়ের অবহেলিত এবং বেদখলীয় জলাভূমি আজ সম্ভাবনার এক উর্বর ক্ষেত্র। এই প্রকল্প ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও একটি প্রেরণা হয়ে থাকবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন।