সাতলায় মৎস্য চাষে সাফল্যের গল্প: মাছ অবমুক্তির ধারাবাহিকতা অব্যাহত

- প্রকাশের সময়: ০৯:৫৮:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫ ৬০ জন পড়েছে
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের মুড়িবাড়ি এলাকায় গড়ে ওঠা ‘উত্তর সাতলা সততা মৎস্য প্রকল্প’ বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম আলোচিত মৎস্য চাষ প্রকল্পে রূপ নিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত ও দখলকৃত অবস্থায় থাকা ঘেরের জমি ফিরে পেয়ে ৮০০ জন প্রকৃত মালিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এই প্রকল্প এখন শুধু মাছ চাষের একটি নমুনা নয়; এটি হয়ে উঠেছে সামাজিক পুনরুদ্ধার, অর্থনৈতিক মুক্তি ও পরিবেশ-সচেতন চাষাবাদের এক অনন্য উদাহরণ।
অর্থনীতির চাকা সচল করছে সাতলার মৎস্য প্রকল্প
প্রকল্পটি শুরু হয় গত ৭ মে ২০২৫ তারিখে, আনুষ্ঠানিকভাবে ৩৫০ মণ পোনা মাছ অবমুক্তের মধ্য দিয়ে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিনই মাছ ছাড়া হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজ ২০ মে, মঙ্গলবার, নতুন করে আরও ৭০০ থেকে ৮০০ মণ মাছ ছাড়া হয়েছে, এবং প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন পরবর্তী ধাপে আরও প্রায় ১০০০ মণ মাছ ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এতো বড় পরিসরে সংগঠিত মাছ চাষ কার্যক্রম ইতোমধ্যে এলাকার অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। প্রকল্পের সদস্যদের পরিবারে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ফিরছে, বাড়ছে কর্মসংস্থান, মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে বাজারে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পের কোষাধ্যক্ষ মোঃ আইয়ুব নূর মিয়া জানান,
“প্রথমদিন ৩৫০ মণ মাছ ফেলার পর আমরা প্রতিদিন ছোট ছোট দলে মাছ ছাড়ছি। এতে করে মাছ পরিবেশের সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিচ্ছে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, সঠিক পরিকল্পনা ও ধৈর্য্য থাকলে এর ফলাফল হবে অত্যন্ত ইতিবাচক।”
পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্বশীল পদক্ষেপ
এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র উৎপাদনের দিকে নজর না দিয়ে ঘেরের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ঘেরের পানি মান নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে মাছ ছাড়া হচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি এখন দেশের অনেক জায়গার মৎস্য প্রকল্পের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।
প্রকল্প সভাপতি মোঃ মিন্টু মিয়া বলেন,
“আমরা প্রতিদিন পানি ও পরিবেশ পরীক্ষা করছি। মাটির পিএইচ, অক্সিজেনের পরিমাণ ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে মাছ ছাড়ছি। পরিবেশ ভালো না থাকলে ফলন ভালো হবে না; এটা আমরা উপলব্ধি করেছি। তাই এটি এখন শুধু জীবিকার উৎস নয়, বরং পরিবেশবান্ধব একটি উদ্যোগও।”
রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত ও প্রশাসনিক সহযোগিতার আহ্বান
এই বৃহৎ উদ্যোগ এখন স্থানীয় রাজনীতি এবং প্রশাসনের নজরেও এসেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বক্তারা সরাসরি উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিশেষ করে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা বলেন, প্রকল্পটি যেন কোনোভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার না হয় এবং এর অগ্রগতি বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য প্রশাসনের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
প্রকল্পের একজন উদ্যোক্তা বলেন,
“আমরা দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে কাজ করছি। কিন্তু কোনো মহল যদি পরিকল্পনা নষ্ট করতে চায়, সেটি শুধু আমাদের নয়, গোটা এলাকার ক্ষতি হবে। তাই আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।”
সাতলার সম্ভাবনার প্রতীক
এলাকাবাসীর মতে, সাতলায় এর আগে কখনো এতো বড় পরিসরে, এতো সংগঠিতভাবে মাছ চাষ হয়নি। এটি এখন শুধু মাছ উৎপাদনের প্রকল্প নয়, বরং একটি সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। যেখানে প্রকৃত জমির মালিকরা নিজেদের অধিকারের পুনরুদ্ধার করেছেন, সম্মিলিতভাবে কাজ করছেন এবং একটি সফল মডেল উপস্থাপন করছেন।