পিনাকী ভট্টাচার্যের প্রস্তাব: ‘চুপ্পু আউট, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি হোক’

- প্রকাশের সময়: ০৯:০৩:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ ৭৯ জন পড়েছে
গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। দেশের বিপুল গণঅভ্যুত্থানের মুখে জাতির প্রধান শেখ হাসিনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতে পালিয়ে যান। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা ছিল, এখন দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে এবং দেশের শাসনব্যবস্থা স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল হস্তান্তর হবে। কিন্তু এই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়ে গেলেও, সেই বদলীর পরিপ্রেক্ষিতে একটি বড় ধরনের রাষ্ট্রীয় শূন্যতা এখনো বিদ্যমান।
যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পলায়ন করেন, তথাপি তার নিয়োগকৃত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ চুপ্পু বর্তমানে রাষ্ট্রপতির পদে আছেন এবং কার্যত ক্ষমতা চালাচ্ছেন। এই বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন ও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। কেন একবছর পার হলেও দেশের শাসনব্যবস্থায় তীব্র পরিবর্তন আসেনি? জনমনে এই উদ্বেগ ও প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে।
জনপ্রিয় লেখক, গবেষক এবং ইউটিউবার পিনাকী ভট্টাচার্য তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে ‘চুপ্পু আউট, কে হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি?’ শিরোনামে একটি আলোচিত ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভিডিওটি মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে চার লাখেরও বেশি দর্শক পেয়েছে এবং ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভিডিওতে পিনাকী উল্লেখ করেছেন, “ভয়ংকর লড়াই ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা শেখ হাসিনাকে বিদায় দিতে পেরেছি। কিন্তু এক বছর পার হলেও আমরা তাঁর শাসনের অবশেষ দূর করতে পারিনি। কেন পারিনি? আর কী করলে পারা সম্ভব, সেটাই এখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।”
ভিডিওতে পিনাকী আরো বলেন, “হাসিনার শাসনের শেষ দিকে তিনি তার নিজের আনুগত মুজিব বাহিনীর লোক ছাড়া কাউকে রাষ্ট্রপতি বানাতেন না। আর সেই ধারাবাহিকতায় চুপ্পু এখনও রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই অবস্থায় কীভাবে আমরা পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব?”
পিনাকী তার আগের একটি ভিডিও থেকে একটি অংশ তুলে ধরেন, যেখানে বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিজে বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম করতে গেলে তিনি সেটা গ্রহণ করতেন না। এমনকি আমি তার পায়ের ধুলোও স্পর্শ করতে পারতাম না।” এই বিবৃতি থেকে বোঝা যায় বর্তমান শাসনব্যবস্থায় গভীর অন্তরায় রয়েছে এবং সুদৃঢ় নেতৃত্বের অভাব রয়েছে।

এদিকে, পিনাকী ভট্টাচার্য এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি নতুন প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, “বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে মনোনীত করার বিকল্প নেই। আমাদের দেশের ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রপতির উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য এবং সম্মানিত, তিনি বেগম খালেদা জিয়া।” তিনি আরও বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ইতিহাসের মহানায়িকা, যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ও লড়াই করার মহিমা শিখিয়েছেন।”
পিনাকী তাঁর বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়ার একটি উক্তি উল্লেখ করেন, “ওদের হাতে গোলামির জিঞ্জির, আর আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা।” এই উক্তিটি বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে।
ভিডিও শেষে পিনাকী ভট্টাচার্য আশা প্রকাশ করেন যে, বেগম খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই দুই মহাপুরুষ মিলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সূচনা করবেন, যা হবে একটি সুশাসিত, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক দেশ। তিনি বলেন, “এই দুই নেতার ঐক্য দেশের জন্য একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।”
এই ভিডিওটি বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং অনেকেই পিনাকীর প্রস্তাবিত রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার নামকে নতুন করে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, আগামী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি কী দিকে অগ্রসর হবে এবং এই প্রস্তাব বাস্তবে রূপ পাবে কিনা।