ঢাকা ১০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের কটাক্ষ উপেক্ষা করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে মুসলিম প্রার্থী জোহরান

হাকিকুল ইসলাম খোকন, বিশেষ প্রতিনিধি-নিউইয়র্ক সিটি
  • প্রকাশের সময়: ০৮:৩৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ ১১২ জন পড়েছে

ট্রাম্পের কটাক্ষ উপেক্ষা করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে মুসলিম প্রার্থী জোহরান

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে ইতিহাস গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৩৩ বছর বয়সী মুসলিম রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে অ্যান্ড্রু কুমোর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিককে হারিয়ে তিনি দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। এই জয়ে তিনি রাতারাতি জাতীয় আলোচনায় উঠে আসেন। এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাকে নিয়ে কটাক্ষ করতে বাধ্য হন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ মামদানিকে ‘‘কট্টর কমিউনিস্ট উন্মাদ’’ এবং ‘‘বুদ্ধিমত্তাহীন, কর্কশ কণ্ঠের হাস্যকর বামপন্থী’’ বলে আক্রমণ করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই তির্যক মন্তব্য মামদানির জনপ্রিয়তাকেই বাড়িয়ে তুলেছে এবং তাকে আরও বেশি করে তরুণ, অভিবাসী এবং প্রগতিশীল ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। জোহরান মামদানি এই সমালোচনাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই গ্রহণ করে বলেছেন, ‘‘আমার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে যদি কেউ ভয় পায়, তাহলে বুঝে নিতে হবে আমি সঠিক পথেই হাঁটছি। আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন-একজন প্রগতিশীল মুসলিম অভিবাসী, যে সত্যিকারের বিশ্বাস থেকে লড়ে।’’

জোহরান মামদানি জন্মেছেন উগান্ডার কাম্পালায়। তার বাবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিশিষ্ট পণ্ডিত মাহমুদ মামদানি এবং মা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বলিউড চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার। মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্কে এসে সেখানেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়ে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি নিউইয়র্কের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান তৈরি করেন। প্রচলিত ধনবান, করপোরেট-সমর্থিত রাজনীতির বিপরীতে তিনি গড়ে তুলেছেন তৃণমূলের ওপর দাঁড়ানো এক শক্তিশালী আন্দোলন।

তার নির্বাচনী এজেন্ডা স্পষ্ট ও সাহসী-প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যায্যমূল্যের সরকারি মুদিদোকান, দুই লাখ নতুন সাশ্রয়ী অ্যাপার্টমেন্ট, ভাড়ানিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ভাড়া না বাড়ানোর অঙ্গীকার, প্রতিটি পরিবারে বিনামূল্যে চাইল্ড কেয়ার এবং নগরব্যাপী সরকারি বাসে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা। এই প্রতিশ্রুতিগুলো সাধারণ মানুষের আশা জাগিয়েছে এবং তাকে বামপন্থী প্রগতিশীল রাজনীতির নতুন মুখ হিসেবে তুলে ধরেছে।

বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমিউনিটি তাকে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে দেখছে। নির্বাচনী প্রচারে তিনি বাংলায় ভিডিও বার্তা দিয়ে বাংলাদেশি ভোটারদের উদ্দেশে সরাসরি আহ্বান করেছেন একটি ন্যায্য নিউইয়র্ক গড়ার আন্দোলনে অংশ নিতে। এমনকি বিজয় ভাষণে তিনি বিশেষ করে ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ ধন্যবাদ জানিয়েছেন যারা স্বেচ্ছাশ্রমে ঘরে ঘরে প্রচারণা চালিয়েছেন।

গত মে মাসে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ডে প্যারেড অনুষ্ঠানে মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন জোহরান মামদানি, বামে ছিলেন রাজনীতিক ও সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন এবং ডানে ডেমোক্র্যাট দেলওয়ার মানিক-যা তার অভিবাসী কমিউনিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগেরই প্রমাণ। যদিও মেয়র নির্বাচন আগামী ৪ নভেম্বর, তবে অনেকের মতে জোহরান মামদানি ইতিমধ্যেই মানুষের আস্থা ও সমর্থন জয় করে নিয়েছেন। এই নির্বাচন শুধু একজন মেয়র বেছে নেওয়ার ভোট নয়, বরং একটি বার্তা-নিউইয়র্ক বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করে, প্রগতিকে ধারণ করে এবং নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্রাম্পের কটাক্ষ উপেক্ষা করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে মুসলিম প্রার্থী জোহরান

প্রকাশের সময়: ০৮:৩৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে ইতিহাস গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৩৩ বছর বয়সী মুসলিম রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে অ্যান্ড্রু কুমোর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিককে হারিয়ে তিনি দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। এই জয়ে তিনি রাতারাতি জাতীয় আলোচনায় উঠে আসেন। এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাকে নিয়ে কটাক্ষ করতে বাধ্য হন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ মামদানিকে ‘‘কট্টর কমিউনিস্ট উন্মাদ’’ এবং ‘‘বুদ্ধিমত্তাহীন, কর্কশ কণ্ঠের হাস্যকর বামপন্থী’’ বলে আক্রমণ করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই তির্যক মন্তব্য মামদানির জনপ্রিয়তাকেই বাড়িয়ে তুলেছে এবং তাকে আরও বেশি করে তরুণ, অভিবাসী এবং প্রগতিশীল ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। জোহরান মামদানি এই সমালোচনাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই গ্রহণ করে বলেছেন, ‘‘আমার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে যদি কেউ ভয় পায়, তাহলে বুঝে নিতে হবে আমি সঠিক পথেই হাঁটছি। আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন-একজন প্রগতিশীল মুসলিম অভিবাসী, যে সত্যিকারের বিশ্বাস থেকে লড়ে।’’

জোহরান মামদানি জন্মেছেন উগান্ডার কাম্পালায়। তার বাবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিশিষ্ট পণ্ডিত মাহমুদ মামদানি এবং মা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বলিউড চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার। মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্কে এসে সেখানেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়ে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি নিউইয়র্কের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান তৈরি করেন। প্রচলিত ধনবান, করপোরেট-সমর্থিত রাজনীতির বিপরীতে তিনি গড়ে তুলেছেন তৃণমূলের ওপর দাঁড়ানো এক শক্তিশালী আন্দোলন।

তার নির্বাচনী এজেন্ডা স্পষ্ট ও সাহসী-প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যায্যমূল্যের সরকারি মুদিদোকান, দুই লাখ নতুন সাশ্রয়ী অ্যাপার্টমেন্ট, ভাড়ানিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ভাড়া না বাড়ানোর অঙ্গীকার, প্রতিটি পরিবারে বিনামূল্যে চাইল্ড কেয়ার এবং নগরব্যাপী সরকারি বাসে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা। এই প্রতিশ্রুতিগুলো সাধারণ মানুষের আশা জাগিয়েছে এবং তাকে বামপন্থী প্রগতিশীল রাজনীতির নতুন মুখ হিসেবে তুলে ধরেছে।

বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমিউনিটি তাকে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে দেখছে। নির্বাচনী প্রচারে তিনি বাংলায় ভিডিও বার্তা দিয়ে বাংলাদেশি ভোটারদের উদ্দেশে সরাসরি আহ্বান করেছেন একটি ন্যায্য নিউইয়র্ক গড়ার আন্দোলনে অংশ নিতে। এমনকি বিজয় ভাষণে তিনি বিশেষ করে ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ ধন্যবাদ জানিয়েছেন যারা স্বেচ্ছাশ্রমে ঘরে ঘরে প্রচারণা চালিয়েছেন।

গত মে মাসে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ডে প্যারেড অনুষ্ঠানে মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন জোহরান মামদানি, বামে ছিলেন রাজনীতিক ও সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন এবং ডানে ডেমোক্র্যাট দেলওয়ার মানিক-যা তার অভিবাসী কমিউনিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগেরই প্রমাণ। যদিও মেয়র নির্বাচন আগামী ৪ নভেম্বর, তবে অনেকের মতে জোহরান মামদানি ইতিমধ্যেই মানুষের আস্থা ও সমর্থন জয় করে নিয়েছেন। এই নির্বাচন শুধু একজন মেয়র বেছে নেওয়ার ভোট নয়, বরং একটি বার্তা-নিউইয়র্ক বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করে, প্রগতিকে ধারণ করে এবং নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।