মাইলস্টোন স্কুল ট্রাজেডি’র সর্বশেষ: ২০ জন নিহত, আহত ১৭১

- প্রকাশের সময়: ১২:৫৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ ১৬২ জন পড়েছে
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭১ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে অনেক শিশু শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং ১টা ১৮ মিনিটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনাস্থলটি ছিল স্কুলের প্লে গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভবন, যেখানে ছুটির পরও কিছু শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক অবস্থান করছিলেন।
আইএসপিআর, ফায়ার সার্ভিস ও বার্ন ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই স্কুল ভবনে আগুন ধরে যায়। টঙ্গী, মিরপুর, কুর্মিটোলা, পূর্বাচলসহ বিভিন্ন ফায়ার স্টেশন থেকে ৯টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির দুটি প্লাটুনও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। বিমানটির পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। আহতদের মধ্যে অনেকেই বার্ন ইউনিটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, যাদের বেশির ভাগের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৭০ জনের বেশি দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। শরীরের ৯৫ শতাংশ বা তার বেশি পুড়ে গেছে এমন শিশুদের মধ্যে রয়েছে-শামীম (১৪), আফনান (১৪), নাফিস (৯), সায়েন ইউসুফ (১৪), মাহিয়া (১৫) ও সামিয়া (১০)। এদের মধ্যে ছয়জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এছাড়া ১০০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে আরিয়ান (১৫) ও মাহরিন (৪৬)-কে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেবল বার্ন ইনস্টিটিউটে ২ জন মারা গেছেন।
আইএসপিআর সূত্রে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিহত ১২, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২, লুবানা জেনারেল হাসপাতালে ২, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে—বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০, লুবানা হাসপাতালে ১১, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৮, সিএমএইচ-এ ১৭ এবং অন্যত্র আরও অনেকে ভর্তি রয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময়কার বর্ণনা দিতে গিয়ে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক নুরুজ্জামান মৃধা বলেন, “হঠাৎ একটা বিকট শব্দ, তারপর দেখি আগুন, ধোঁয়া আর আর্তনাদ। কয়েকজন শিক্ষক মিলে পোড়া শিশুদের রিকশায় তুলে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। অনেকের শরীরের কাপড় পুড়ে গিয়েছিল, কেউ কেউ নিজের পোড়া শরীর নিয়ে হেঁটেই উদ্ধারযানের দিকে যাচ্ছিল।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, সেনা সদস্যরা আহত শিশুদের কাঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন, আশেপাশে স্থানীয় মানুষ সহায়তা করছেন।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাইলটসহ যারা এই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এটি জাতির জন্য এক গভীর বেদনার মুহূর্ত। আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি।” একই সঙ্গে সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে চালু করা হয়েছে জরুরি হটলাইন: ০১৯৪৯০৪৩৬৯৭।