ঢাকা ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের হামলার মুখে খামেনেই বাংকারে, যুদ্ধক্ষমতা IRGC-র হাতে

ডিএসবি ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়: ১২:০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ ৫২ জন পড়েছে

খামেনেই বাংকারে, যুদ্ধক্ষমতা IRGC-র হাতে

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থা যখন ক্রমেই উত্তপ্ত, ঠিক সেই সময়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই তার সমস্ত সামরিক ও যুদ্ধ সংক্রান্ত ক্ষমতা ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC)-এর সুপ্রিম কাউন্সিলের হাতে হস্তান্তর করেছেন। বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তটি। বিশেষজ্ঞরা এটিকে একটি “প্রাক-সচেতন নিরাপত্তামূলক কৌশল” বলে মনে করছেন, যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের অবিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে গৃহীত।

এই পরিস্থিতিতে খামেনেই ও তার ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বের ল্যাভিজান এলাকায় অবস্থিত একটি অত্যাধুনিক সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ বাংকারে স্থানান্তর করা হয়েছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি অনুযায়ী, তিনি গত কয়েকদিনে জনসমক্ষে আর উপস্থিত হননি। তাঁর ছেলে মজতবা খামেনেই সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ওই বাংকারে অবস্থান করছেন।

ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান এবং ড্রোন হামলায় সম্প্রতি ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এতে একাধিক শীর্ষস্থানীয় IRGC কমান্ডার নিহত হন। এরই প্রেক্ষিতে ইরান পাল্টা আঘাতে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা উভয়পক্ষের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

এ অবস্থায় খামেনেইয়ের নেতৃত্বাধীন ধর্মীয়-রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামো বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, তারা এখন কেবল ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তু নয়, বরং খামেনেইয়ের “ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু”তেও আঘাত হানার কৌশল নিয়েছে। এই ধাক্কা খামেনেইয়ের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও দেশীয় নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, IRGC–এর হাতে যুদ্ধক্ষমতা হস্তান্তর একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে। যদি খামেনেই নিহত হন বা অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে যাতে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনও ছেদ না পড়ে, সেই লক্ষ্যে এটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এক নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। IRGC পূর্ব থেকেই ইরানের অর্থনীতি, রাজনীতি ও পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে আসছে। এবার যুদ্ধ পরিচালনার সম্পূর্ণ ভার পেয়ে তারা কার্যত দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের কাছাকাছি পৌঁছে গেল।

বিশ্বজুড়ে এই পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রশাসন ও ইউরোপীয় দেশগুলো নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। কারণ, ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যদি পুরোপুরি IRGC–এর হাতে চলে যায়, তাহলে তা গোটা অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতি ও কৌশলগত ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ইসরায়েলের হামলার মুখে খামেনেই বাংকারে, যুদ্ধক্ষমতা IRGC-র হাতে

প্রকাশের সময়: ১২:০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থা যখন ক্রমেই উত্তপ্ত, ঠিক সেই সময়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই তার সমস্ত সামরিক ও যুদ্ধ সংক্রান্ত ক্ষমতা ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC)-এর সুপ্রিম কাউন্সিলের হাতে হস্তান্তর করেছেন। বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তটি। বিশেষজ্ঞরা এটিকে একটি “প্রাক-সচেতন নিরাপত্তামূলক কৌশল” বলে মনে করছেন, যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের অবিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করতে গৃহীত।

এই পরিস্থিতিতে খামেনেই ও তার ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বের ল্যাভিজান এলাকায় অবস্থিত একটি অত্যাধুনিক সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ বাংকারে স্থানান্তর করা হয়েছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি অনুযায়ী, তিনি গত কয়েকদিনে জনসমক্ষে আর উপস্থিত হননি। তাঁর ছেলে মজতবা খামেনেই সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ওই বাংকারে অবস্থান করছেন।

ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান এবং ড্রোন হামলায় সম্প্রতি ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এতে একাধিক শীর্ষস্থানীয় IRGC কমান্ডার নিহত হন। এরই প্রেক্ষিতে ইরান পাল্টা আঘাতে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা উভয়পক্ষের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

এ অবস্থায় খামেনেইয়ের নেতৃত্বাধীন ধর্মীয়-রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামো বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সূত্র অনুযায়ী, তারা এখন কেবল ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তু নয়, বরং খামেনেইয়ের “ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু”তেও আঘাত হানার কৌশল নিয়েছে। এই ধাক্কা খামেনেইয়ের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও দেশীয় নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, IRGC–এর হাতে যুদ্ধক্ষমতা হস্তান্তর একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে। যদি খামেনেই নিহত হন বা অক্ষম হয়ে পড়েন, তাহলে যাতে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনও ছেদ না পড়ে, সেই লক্ষ্যে এটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এক নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। IRGC পূর্ব থেকেই ইরানের অর্থনীতি, রাজনীতি ও পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে আসছে। এবার যুদ্ধ পরিচালনার সম্পূর্ণ ভার পেয়ে তারা কার্যত দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের কাছাকাছি পৌঁছে গেল।

বিশ্বজুড়ে এই পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রশাসন ও ইউরোপীয় দেশগুলো নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। কারণ, ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যদি পুরোপুরি IRGC–এর হাতে চলে যায়, তাহলে তা গোটা অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতি ও কৌশলগত ভারসাম্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।