ঢাকা ১০:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় যুবলীগ নেতা দুখু মিয়া ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে

মোঃ মিঠু মিয়া, গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময়: ০৬:১১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ ৪৫ জন পড়েছে

গাইবান্ধায় যুবলীগ নেতা দুখু মিয়া ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে

গাইবান্ধা জেলা শহরের প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা ও কুখ্যাত ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত দুখু মিয়াকে ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার (তারিখ দিন) দুপুরে শুনানি শেষে আদালত এ নির্দেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, গাইবান্ধা পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুন্নী বেগমের একটি জায়গা জোর করে দখল করার উদ্দেশ্যে দুখু মিয়া ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। মুন্নী বেগম চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে জমি দখলের ভয়, প্রাণনাশের হুমকি এবং নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। পরে ভুক্তভোগী মুন্নী বেগম আদালতের আশ্রয় নেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দুখু মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন।

মামলা হওয়ার পর থেকে বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দুখু মিয়া বহুদিন ধরেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে অসহায় মানুষের কাছ থেকে জিম্মি করে টাকা আদায় করে আসছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে তার এই দখলবাজি ও চাঁদাবাজি কার্যক্রম চলছিল এতদিন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় দুখু মিয়ার রয়েছে একটি সুদের কারবারের সিন্ডিকেট। লক্ষ লক্ষ টাকার সুদ ব্যবসা চালিয়ে আসছে সে। কেউ সুদের টাকা সময়মতো পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ভয় দেখানো হতো। এমনকি শারীরিক নির্যাতন, সামাজিকভাবে হেয় করা, ব্যবসা-বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করা-এসব নানামুখী কৌশলে মানুষকে জিম্মি করা হতো।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্যে উঠে এসেছে, দুখু মিয়া একজন মাদকসেবী হিসেবেও এলাকায় পরিচিত। তার কারণে শহরের পুরাতন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকের বিস্তার ঘটেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ব্যবসায়ী আইয়ুব আলীসহ অনেকেই বলেছেন, তারা দুখু মিয়ার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হতো।

এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এমন সন্ত্রাস, দখল ও চাঁদাবাজির রাজত্ব চালিয়েও দুখু মিয়া অদৃশ্য রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। মুন্নী বেগম সাহস করে আদালতে মামলা করার পর অবশেষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

এদিকে মামলার শুনানি শেষে আদালত দুখু মিয়াকে জামিন না দিয়ে সরাসরি কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। স্থানীয় সুধীমহল বলছে, এই রায় সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে এবং প্রভাবশালী চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অন্য ভুক্তভোগীরাও ন্যায়বিচারের আশায় এগিয়ে আসবেন।

তবে দুখু মিয়ার কারাবাসের পরেও তার সিন্ডিকেট এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, শুধু তাকে আটক করলেই সমস্যার সমাধান হবে না; তার অবৈধ সম্পদ, সুদের কারবার, মাদক ব্যবসা ও দখলবাজ সিন্ডিকেটও ভাঙতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

গাইবান্ধায় যুবলীগ নেতা দুখু মিয়া ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে

প্রকাশের সময়: ০৬:১১:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

গাইবান্ধা জেলা শহরের প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা ও কুখ্যাত ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত দুখু মিয়াকে ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার (তারিখ দিন) দুপুরে শুনানি শেষে আদালত এ নির্দেশ দেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, গাইবান্ধা পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুন্নী বেগমের একটি জায়গা জোর করে দখল করার উদ্দেশ্যে দুখু মিয়া ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। মুন্নী বেগম চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে জমি দখলের ভয়, প্রাণনাশের হুমকি এবং নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। পরে ভুক্তভোগী মুন্নী বেগম আদালতের আশ্রয় নেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দুখু মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন।

মামলা হওয়ার পর থেকে বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দুখু মিয়া বহুদিন ধরেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে অসহায় মানুষের কাছ থেকে জিম্মি করে টাকা আদায় করে আসছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে তার এই দখলবাজি ও চাঁদাবাজি কার্যক্রম চলছিল এতদিন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় দুখু মিয়ার রয়েছে একটি সুদের কারবারের সিন্ডিকেট। লক্ষ লক্ষ টাকার সুদ ব্যবসা চালিয়ে আসছে সে। কেউ সুদের টাকা সময়মতো পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ভয় দেখানো হতো। এমনকি শারীরিক নির্যাতন, সামাজিকভাবে হেয় করা, ব্যবসা-বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করা-এসব নানামুখী কৌশলে মানুষকে জিম্মি করা হতো।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্যে উঠে এসেছে, দুখু মিয়া একজন মাদকসেবী হিসেবেও এলাকায় পরিচিত। তার কারণে শহরের পুরাতন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকের বিস্তার ঘটেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ব্যবসায়ী আইয়ুব আলীসহ অনেকেই বলেছেন, তারা দুখু মিয়ার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হতো।

এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এমন সন্ত্রাস, দখল ও চাঁদাবাজির রাজত্ব চালিয়েও দুখু মিয়া অদৃশ্য রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। মুন্নী বেগম সাহস করে আদালতে মামলা করার পর অবশেষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

এদিকে মামলার শুনানি শেষে আদালত দুখু মিয়াকে জামিন না দিয়ে সরাসরি কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। স্থানীয় সুধীমহল বলছে, এই রায় সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে এবং প্রভাবশালী চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অন্য ভুক্তভোগীরাও ন্যায়বিচারের আশায় এগিয়ে আসবেন।

তবে দুখু মিয়ার কারাবাসের পরেও তার সিন্ডিকেট এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, শুধু তাকে আটক করলেই সমস্যার সমাধান হবে না; তার অবৈধ সম্পদ, সুদের কারবার, মাদক ব্যবসা ও দখলবাজ সিন্ডিকেটও ভাঙতে হবে।