বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেছেন দলের মালয়েশিয়া শাখার সহ-সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ঝালকাঠির রাজনীতিতে পরিচিত মুখ ড. ফয়জুল হক। শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘোষণা দেন।

বিবৃতিতে ড. ফয়জুল হক অভিযোগ করেন, বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব বামঘেঁষা নীতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ইসলামপন্থীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, যা আওয়ামী লীগের অবস্থানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমি সব সময় চেয়েছি একটি স্বাধীন, ন্যায়ভিত্তিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনীতি করতে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করছি, বিএনপির নেতৃত্ব বামঘেঁষা মতাদর্শের দিকে ঝুঁকছে। এতে ইসলামপন্থীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, যা আওয়ামী লীগের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

তিনি আরও লিখেছেন, “আমি পাথর দিয়ে মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিকে সমর্থন করি না। আমি সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সাহস নিয়ে রাজনীতি করতে চাই। মৃত্যুর আগপর্যন্ত এই নীতিতে অবিচল থাকব।”

ফয়জুল হক তাঁর বিবৃতিতে স্পষ্ট করেন যে তিনি কোনো দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে বা চক্রান্তমূলক কারণে এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন না, বরং নিজের বিবেক, মূল্যবোধ এবং রাজনৈতিক দর্শনের কারণেই এই সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, “আমার রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত সমাজের জন্য। কোনো দল বা নেতৃত্ব যদি জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দেয়, তার সমর্থক হয়ে থাকা সম্ভব নয়।”

পদত্যাগের ঘোষণার পাশাপাশি ড. ফয়জুল হক ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করারও ঘোষণা দিয়েছেন। এতে ঝালকাঠি জেলার রাজনীতিতে নতুন করে সমীকরণ তৈরি হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ত ফয়জুল হক ২০১৫ সাল থেকে দলের মালয়েশিয়া শাখার সহ-সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রবাসী রাজনীতির মাধ্যমে দলের নীতিমালা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় পর্যায়েও সক্রিয় ছিলেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন।

তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা বজায় রেখেছেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, “সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের অবদান আমি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরেই ড. ফয়জুল হক দলের কৌশল ও বক্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন।

ঝালকাঠি-১ আসনে তাঁর স্বতন্ত্র প্রার্থিতা স্থানীয় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের উভয় শিবিরে নতুন কৌশল ভাবনায় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।