ঢাকা ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরে ৩৪ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক ফাঁস: ব্যবসায়ী নিজেই পরিকল্পনাকারী

রনজিৎ সরকার রাজ, দিনাজপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময়: ১০:৪০:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫ ১৮ জন পড়েছে

দিনাজপুরে ৩৪ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক ফাঁস: ব্যবসায়ী নিজেই পরিকল্পনাকারী

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ৩৪ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগের নাটক ফাঁস হয়ে গেছে। ঘটনায় জড়িত কেউ নয়, অভিযোগকারী ব্যবসায়ী মোঃ মইনুল ইসলাম নিজেই এই ‘ছিনতাই নাটক’ সাজিয়েছেন বলে পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২৫ জুন ২০২৫) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে। বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ মোবাইল ফোনে খবর পান যে, বানিয়াপাড়া রেলগেট সংলগ্ন ব্রিজ এলাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ৩৪ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ পেয়েই অফিসার ইনচার্জ তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেন এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে ভিকটিম পরিচয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তি মোঃ মইনুল ইসলাম (৫৫), পিতা- মৃত খোরশেদ আলী, সাং- গোপালপুর, থানা- বিরল, কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তিনি বাড়ি থেকে ২৬ লক্ষ টাকা ও এনআরবিসি ব্যাংক বিরল শাখা থেকে উত্তোলন করা ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলে করে দিনাজপুর শহরের অগ্রণী ব্যাংকে ঋণ পরিশোধ করতে যাচ্ছিলেন। পথে বানিয়াপাড়া ব্রিজ এলাকায় অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারীরা তার পথরোধ করে অস্ত্র ঠেকিয়ে পুরো অর্থ ছিনিয়ে নেয়।

সংবেদনশীল এ ঘটনায় দ্রুত তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশ সুপার, দিনাজপুর মহোদয়ের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হয় এবং ব্যাংক ও আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত তথ্যসহ বিভিন্ন দিক থেকে অনুসন্ধান চালানো হয়।

তদন্তে উঠে আসে বিস্ময়কর তথ্য— মোঃ মইনুল ইসলাম বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঋণ পরিশোধের সময় না পেয়ে তিনি কৌশলে ‘ছিনতাইয়ের নাটক’ সাজান, যাতে সময় ও করুণা অর্জন করে চাপ কমানো যায়।

তদন্তকারীরা যখন তাকে নিয়ে বাড়িতে তল্লাশির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন মইনুল ইসলাম নিজেই ‘ভুল স্বীকার’ করে সব কিছু ফাঁস করেন। এরপর নিজের বাড়ি সংলগ্ন অফিস ঘর থেকে তিনি তদন্ত টিমের কাছে মোবাইল, মানিব্যাগ, মোটরসাইকেলের চাবি এবং ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা ৮ লক্ষ টাকা সহ মোট ১১ লক্ষ টাকা হস্তান্তর করেন।

নিরাপত্তাজনিত কারণে তার ইচ্ছায় টাকাগুলো বর্তমানে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “ছিনতাইয়ের অভিযোগকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স ও সময় ব্যয় হয়। এরপরও আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ঘটনা উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধা হয়।”

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

দিনাজপুরে ৩৪ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক ফাঁস: ব্যবসায়ী নিজেই পরিকল্পনাকারী

প্রকাশের সময়: ১০:৪০:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ৩৪ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগের নাটক ফাঁস হয়ে গেছে। ঘটনায় জড়িত কেউ নয়, অভিযোগকারী ব্যবসায়ী মোঃ মইনুল ইসলাম নিজেই এই ‘ছিনতাই নাটক’ সাজিয়েছেন বলে পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২৫ জুন ২০২৫) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে। বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ মোবাইল ফোনে খবর পান যে, বানিয়াপাড়া রেলগেট সংলগ্ন ব্রিজ এলাকায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ৩৪ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ পেয়েই অফিসার ইনচার্জ তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেন এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে ভিকটিম পরিচয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তি মোঃ মইনুল ইসলাম (৫৫), পিতা- মৃত খোরশেদ আলী, সাং- গোপালপুর, থানা- বিরল, কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তিনি বাড়ি থেকে ২৬ লক্ষ টাকা ও এনআরবিসি ব্যাংক বিরল শাখা থেকে উত্তোলন করা ৮ লক্ষ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলে করে দিনাজপুর শহরের অগ্রণী ব্যাংকে ঋণ পরিশোধ করতে যাচ্ছিলেন। পথে বানিয়াপাড়া ব্রিজ এলাকায় অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারীরা তার পথরোধ করে অস্ত্র ঠেকিয়ে পুরো অর্থ ছিনিয়ে নেয়।

সংবেদনশীল এ ঘটনায় দ্রুত তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশ সুপার, দিনাজপুর মহোদয়ের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করা হয় এবং ব্যাংক ও আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত তথ্যসহ বিভিন্ন দিক থেকে অনুসন্ধান চালানো হয়।

তদন্তে উঠে আসে বিস্ময়কর তথ্য— মোঃ মইনুল ইসলাম বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঋণ পরিশোধের সময় না পেয়ে তিনি কৌশলে ‘ছিনতাইয়ের নাটক’ সাজান, যাতে সময় ও করুণা অর্জন করে চাপ কমানো যায়।

তদন্তকারীরা যখন তাকে নিয়ে বাড়িতে তল্লাশির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন মইনুল ইসলাম নিজেই ‘ভুল স্বীকার’ করে সব কিছু ফাঁস করেন। এরপর নিজের বাড়ি সংলগ্ন অফিস ঘর থেকে তিনি তদন্ত টিমের কাছে মোবাইল, মানিব্যাগ, মোটরসাইকেলের চাবি এবং ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা ৮ লক্ষ টাকা সহ মোট ১১ লক্ষ টাকা হস্তান্তর করেন।

নিরাপত্তাজনিত কারণে তার ইচ্ছায় টাকাগুলো বর্তমানে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “ছিনতাইয়ের অভিযোগকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স ও সময় ব্যয় হয়। এরপরও আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ঘটনা উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধা হয়।”