কুমিল্লার তিতাসে দিনমজুর খুন: আইনজীবীর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি

- প্রকাশের সময়: ০৫:১৯:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ ৫৯ জন পড়েছে
কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে একজন ভিনদেশী দিনমজুরকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় এলাকায় শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক সচেতন স্থানীয় নাগরিক এবং কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের শিক্ষানবীশ আইনজীবী। তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন, “আল্লাহ তাদের সহায়ক হোন।” একইসাথে তিনি পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “কে বা কারা এই খুন করেছে, এর প্রকৃত কারণ কি—তা বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” এই ভিনদেশী দিনমজুরের সাথে এলাকার কারো শত্রুতা ছিল কি, কোনো আর্থিক লেনদেন, পারিবারিক বা সামাজিক বিরোধ, স্বভাব চরিত্র বা আচরণগত সমস্যা, পূর্বের কোনো বিরোধ—সব কিছু পুলিশকে খুঁজে বের করে তদন্ত করতে হবে। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ সালের আলোকে ঘটনার সম্পূর্ণ সত্য উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেছেন। ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ রাতে তার বাবাকে ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি নিজেই সেই মামলার এজাহারকারী। মামলাটি তিতাস থানার মামলা নং ৭ (২৫/৩/১৮) ধারা ৩০২/১০৯/৩৪ দণ্ডবিধি অনুযায়ী রুজু হয় এবং বর্তমানে কুমিল্লা আদালতে বিচারাধীন। তিনি জানান, আসামিরা দীর্ঘ সময় জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আবারও এলাকায় প্রভাব খাটাচ্ছে, মামলার সাক্ষীদের এবং তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে নানা ধরনের অপরাধ করছে—খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হামলা, এমনকি শিক্ষার্থী আন্দোলনে হামলা করায় তাদের বিরুদ্ধে বৌষম্যবিরোধী মামলাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। এসব কারণে তিনি নিজে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কুমিল্লা শহরে বসবাস করছেন।
এ ছাড়া তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে তিতাস উপজেলা ও ভাটিপাড়া গ্রামে খুনের পর খুন হচ্ছে। কিছু ঘটনার তদন্ত হয়, মামলা হয়, আসামি গ্রেফতারও হয়। কিন্তু তারা আবার জামিনে বের হয়ে যায়। এরপর প্রভাব খাটিয়ে সাক্ষীদের ভয় দেখানো হয়, আর্থিক লোভ দেখিয়ে আপোষে বাধ্য করা হয়।” অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদী পক্ষ আর্থিক অনটনের কারণে মামলা চালাতে পারে না বা পুলিশ–আদালতের ঝামেলা এড়িয়ে চলে।
তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, “যারা সাহস করে মামলা চালায়, তারা দেখে আসামিরা টাকার জোরে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জামিন পেয়ে যায়। এরপর আবার ভয়ভীতি ও অত্যাচার বাড়িয়ে দেয়। সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে আসল সত্য বলতে সাহস পায় না। তখন সাক্ষী আদালতে বলে—কিছুই জানি না। এতে বিচারকও প্রমাণের অভাবে খালাস দিতে বাধ্য হন।”
তিনি আরও বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ সালের তদন্ত ও বিচার পদ্ধতিতে সংস্কার দরকার। বিদেশের মতো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন আরও কঠোর করতে হবে। জামিনের শর্ত কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। জামিন অযোগ্য অপরাধে আদালতকে খুব সতর্ক হয়ে জামিন দিতে হবে এবং প্রয়োজনে জামিন বাতিলের নিয়ম আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”
সবশেষে তিনি বলেন, “সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিককে সাহসী হতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ভয় না পেয়ে পুলিশকে আশ্রয়-সহযোগিতা নিতে হবে। অপরাধ সংঘটনের খবর দ্রুত পুলিশকে দিতে হবে। সাধারণ মানুষের তুলনায় অপরাধীর সংখ্যা খুবই কম। সবাই একজোট হয়ে দাঁড়ালে অপরাধী চক্র পিছু হটতে বাধ্য হবে। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”