ঢাকা ১০:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভাড়া করা ডাক্তারের অপারেশনে মৃত্যু: ক্লিনিক মালিকের বিচার দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)
  • প্রকাশের সময়: ০৯:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ ৬৬ জন পড়েছে

ভাড়া করা ডাক্তারের অপারেশনে মৃত্যু: ক্লিনিক মালিকের বিচার দাবি

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনার জেরে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, ‘একতা ক্লিনিক’ নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ানের নামে অপারেশন করতে গিয়ে ১৯ বছর বয়সী গর্ভবতী মা আশা মনি-কে মারাত্মক গাফিলতি ও অদক্ষ চিকিৎসার মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অপারেশনের পর যখন আশা মনি মারা যান, তখন পরিবারের সদস্যদের বিভ্রান্ত করতে তাকে ‘আইসিইউতে ভর্তি’ বলে নাটক সাজায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

আইসিইউ নাটক ও টাকার বিনিময়ে ধামাচাপার চেষ্টা!

ঘটনার পরপরই মৃতদেহের হস্তান্তরের সময় ক্লিনিক মালিক পক্ষ ও সংশ্লিষ্ট চক্র মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রেখে একটি নিরব বোঝাপড়ায় নিয়ে যেতে চায় তারা। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও বিতর্কের জন্ম হয়েছে।

সিন্ডিকেট ও ভাড়াটে চিকিৎসক: জনতার প্রশ্ন—কে নেবে দায়?

স্থানীয়দের দাবি, একতা ক্লিনিক দীর্ঘদিন ধরে ভাড়ায় আনা অদক্ষ ডাক্তার দিয়ে প্রসূতি ও অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে। ডাক্তার ইয়াসমিন নামের যিনি অপারেশন করেছেন, তার প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা নিয়েও উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন। এলাকাবাসী বলছে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি সুপরিকল্পিত গাফিলতির পরিণতি এবং এক ধরনের মৃত্যু ফাঁদ

বীরগঞ্জের ইউপি সদস্য সেলিম রেজা বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই একতা ক্লিনিকের কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই ঘটনায় যদি প্রশাসন দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামবে।”

ঘটনার তদন্ত ও জনগণের দাবি

বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, “ঘটনাটি তদন্তে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, বছরের পর বছর ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও কেন কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না? কী কারণে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর লাইসেন্স, যন্ত্রপাতি, জনবল ও সেবার মান যাচাই হয় না? এসব প্রশ্নের উত্তর চায় বীরগঞ্জবাসী।

গণআন্দোলনের প্রস্তুতি: চিকিৎসা নয়, চলছে বাণিজ্য!

সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ ও তরুণরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—সিজারের নামে এখন চলছে সরাসরি মৃত্যু বাণিজ্য। একটি ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটার থাকলেই হবে না; সেখানে দক্ষ ডাক্তার, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নার্স, জরুরি ব্যবস্থাপনা ও আইসিইউ সুবিধা থাকতে হবে।

জানা গেছে, এলাকায় গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে উপজেলা প্রশাসন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। “ভাড়া করা ডাক্তার দিয়ে মা-শিশুর জীবন নিয়ে খেলা চলবে না”—এই স্লোগানে উত্তাল বীরগঞ্জের জনতা।

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ভাড়া করা ডাক্তারের অপারেশনে মৃত্যু: ক্লিনিক মালিকের বিচার দাবি

প্রকাশের সময়: ০৯:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনার জেরে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, ‘একতা ক্লিনিক’ নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ানের নামে অপারেশন করতে গিয়ে ১৯ বছর বয়সী গর্ভবতী মা আশা মনি-কে মারাত্মক গাফিলতি ও অদক্ষ চিকিৎসার মাধ্যমে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অপারেশনের পর যখন আশা মনি মারা যান, তখন পরিবারের সদস্যদের বিভ্রান্ত করতে তাকে ‘আইসিইউতে ভর্তি’ বলে নাটক সাজায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

আইসিইউ নাটক ও টাকার বিনিময়ে ধামাচাপার চেষ্টা!

ঘটনার পরপরই মৃতদেহের হস্তান্তরের সময় ক্লিনিক মালিক পক্ষ ও সংশ্লিষ্ট চক্র মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রেখে একটি নিরব বোঝাপড়ায় নিয়ে যেতে চায় তারা। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও বিতর্কের জন্ম হয়েছে।

সিন্ডিকেট ও ভাড়াটে চিকিৎসক: জনতার প্রশ্ন—কে নেবে দায়?

স্থানীয়দের দাবি, একতা ক্লিনিক দীর্ঘদিন ধরে ভাড়ায় আনা অদক্ষ ডাক্তার দিয়ে প্রসূতি ও অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে। ডাক্তার ইয়াসমিন নামের যিনি অপারেশন করেছেন, তার প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা নিয়েও উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন। এলাকাবাসী বলছে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি সুপরিকল্পিত গাফিলতির পরিণতি এবং এক ধরনের মৃত্যু ফাঁদ

বীরগঞ্জের ইউপি সদস্য সেলিম রেজা বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই একতা ক্লিনিকের কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই ঘটনায় যদি প্রশাসন দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামবে।”

ঘটনার তদন্ত ও জনগণের দাবি

বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, “ঘটনাটি তদন্তে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, বছরের পর বছর ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও কেন কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না? কী কারণে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর লাইসেন্স, যন্ত্রপাতি, জনবল ও সেবার মান যাচাই হয় না? এসব প্রশ্নের উত্তর চায় বীরগঞ্জবাসী।

গণআন্দোলনের প্রস্তুতি: চিকিৎসা নয়, চলছে বাণিজ্য!

সুশীল সমাজ, নাগরিক সমাজ ও তরুণরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—সিজারের নামে এখন চলছে সরাসরি মৃত্যু বাণিজ্য। একটি ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটার থাকলেই হবে না; সেখানে দক্ষ ডাক্তার, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নার্স, জরুরি ব্যবস্থাপনা ও আইসিইউ সুবিধা থাকতে হবে।

জানা গেছে, এলাকায় গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে উপজেলা প্রশাসন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। “ভাড়া করা ডাক্তার দিয়ে মা-শিশুর জীবন নিয়ে খেলা চলবে না”—এই স্লোগানে উত্তাল বীরগঞ্জের জনতা।