ঢাকা ১০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীরগঞ্জে চাকরির পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক ব্যবসা: বিতর্কে তানভীর ইসলাম

রনজিৎ সরকার রাজ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময়: ০৯:৩৯:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ ৩১ জন পড়েছে

বীরগঞ্জে চাকরির পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক ব্যবসা: বিতর্কে তানভীর ইসলাম

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে অবস্থিত নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ঘিরে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী তানভীর ইসলাম, যিনি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত, তিনি চাকরির পাশাপাশি বীরগঞ্জে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতি সপ্তাহে কয়েক দিন করে রোগী দেখেন এবং সিজার অপারেশন করেন আলোচিত চিকিৎসক ইয়াসমিন ইসলাম। তিনি বীরগঞ্জের একতা ক্লিনিকে বেশ কয়েকটি সিজারিয়ান অপারেশন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত, যার মধ্যে একটি প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড় হয়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক ক্লিনিক মালিকের অভিযোগ, ডা. ইয়াসমিন অপারেশনের সময় এনেসথেশিয়া বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার না নিয়ে শিক্ষানবিশ ছাত্রদের নিয়ে থিয়েটারে প্রবেশ করেন, কোন অ্যাসিস্ট্যান্ট রাখেন না এবং রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

বীরগঞ্জের সা’দ ক্লিনিকের মালিক আহসান হাবিব শামীম বলেন, “ওনার (ডা. ইয়াসমিনের) বিরুদ্ধে এত অভিযোগ এসেছে যে আমরা কোনো ক্লিনিকে ওনাকে আর ডাকি না।” তবে নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সহায়তায় এখনো নিয়মিত রোগী দেখেন তিনি।

স্থানীয়দের প্রশ্ন—একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন এবং একইসাথে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন? এছাড়া, অনুমোদনহীনভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত চিকিৎসক ইয়াসমিন ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তানভীর ইসলাম বলেন, “আমি সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা সততার সাথেই পরিচালনা করি। কে কি বললো তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”

এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা বলেন, “আমরা পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করছি। অনিয়ম প্রমাণিত হলে অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল স্টাফ কীভাবে পৃথক উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ডাক্তার চালান, এবং একাধিক অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে এখনো সক্রিয়ভাবে চলছে? স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বীরগঞ্জে চাকরির পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক ব্যবসা: বিতর্কে তানভীর ইসলাম

প্রকাশের সময়: ০৯:৩৯:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে অবস্থিত নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ঘিরে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী তানভীর ইসলাম, যিনি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ল্যাব টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত, তিনি চাকরির পাশাপাশি বীরগঞ্জে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতি সপ্তাহে কয়েক দিন করে রোগী দেখেন এবং সিজার অপারেশন করেন আলোচিত চিকিৎসক ইয়াসমিন ইসলাম। তিনি বীরগঞ্জের একতা ক্লিনিকে বেশ কয়েকটি সিজারিয়ান অপারেশন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত, যার মধ্যে একটি প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড় হয়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক ক্লিনিক মালিকের অভিযোগ, ডা. ইয়াসমিন অপারেশনের সময় এনেসথেশিয়া বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার না নিয়ে শিক্ষানবিশ ছাত্রদের নিয়ে থিয়েটারে প্রবেশ করেন, কোন অ্যাসিস্ট্যান্ট রাখেন না এবং রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

বীরগঞ্জের সা’দ ক্লিনিকের মালিক আহসান হাবিব শামীম বলেন, “ওনার (ডা. ইয়াসমিনের) বিরুদ্ধে এত অভিযোগ এসেছে যে আমরা কোনো ক্লিনিকে ওনাকে আর ডাকি না।” তবে নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সহায়তায় এখনো নিয়মিত রোগী দেখেন তিনি।

স্থানীয়দের প্রশ্ন—একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন এবং একইসাথে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন? এছাড়া, অনুমোদনহীনভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত চিকিৎসক ইয়াসমিন ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক তানভীর ইসলাম বলেন, “আমি সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা সততার সাথেই পরিচালনা করি। কে কি বললো তাতে আমার কিছু আসে যায় না।”

এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজ সুলতানা লুনা বলেন, “আমরা পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করছি। অনিয়ম প্রমাণিত হলে অনুমোদনহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল স্টাফ কীভাবে পৃথক উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ডাক্তার চালান, এবং একাধিক অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে এখনো সক্রিয়ভাবে চলছে? স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।