ঢাকা ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বীরগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগে মেম্বারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

রনজিৎ সরকার রাজ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময়: ০৫:৫০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫ ৫১ জন পড়েছে

বীরগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগে মেম্বারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস এবং ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আবু হানিফের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রকাশ্য বিরোধ ফের উত্তপ্ত রূপ নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের এক বৈঠকে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হলে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পরে উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যস্থতায় আপোষ হলেও বিরোধে থাকা মেম্বার হানিফের মনে প্রতিহিংসার আগুন নেভেনি বলে স্থানীয়দের দাবি।

গতকাল ২৬ জুন ২০২৫ তারিখ সন্ধ্যার পর খলসী বাজার সংলগ্ন এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার পর এক উঠান বৈঠকে ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। বাবুল ও দুলুর জমি নিয়ে মাপজোখ ও দিনের বৈঠকের পর সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস উপস্থিত থাকাকালে মেম্বার আবু হানিফ তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। চেয়ারম্যানের সমর্থক মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে ফরিদ আলীসহ অন্যরা বাধা দিলে হানিফ পিছু হটতে বাধ্য হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই উত্তেজিত পরিস্থিতিতে মেম্বার হানিফের পক্ষে তার স্ত্রী রোজিনা ও ছেলে রাজিবুল ছাড়া কেউ দাঁড়ায়নি।

অভিযোগ আছে, হানিফ মেম্বার এলাকাবাসীর সহায়তায় চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করারও চেষ্টা চালান, তবে ব্যর্থ হন। পরে সংঘর্ষে চেয়ারম্যানের সমর্থক ফরিদ আলীকে মারধর করে তার পকেট থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসকে আটকে রেখে তার পকেট থেকে ৭৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। আহত ফরিদ আলী রাতেই বীরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা রেকর্ড করা হয়, যার নম্বর ২২।

রাতে পুলিশ অভিযুক্ত মেম্বার হানিফের বাড়িতে অভিযান চালালেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে ফেসবুক লাইভে আবু হানিফ দাবি করেন, পুলিশ তার বাড়ি ঘেরাও করেছিল—এই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়। বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল গফুর ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শিহাব উদ্দিন বিষয়টি তদারকি করেন।

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসের শত শত নেতাকর্মী-সমর্থক তার পাশে এসে জড়ো হন এবং তাকে উদ্ধার করে মিছিল সহকারে বীরগঞ্জ থানার সামনে এসে বিক্ষোভ করেন। তারা মেম্বার হানিফের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দেন। বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত জনতাকে শান্তনা ও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু, ফজলে আলম শাহীন, আলহাজ্ব তানভীর আহমেদ চৌধুরী, শাহজাহান সিরাজ শিপন, আরিফ মাসুম পল্লব, আব্দুল জব্বার প্রমুখ।

এ সময় বীরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাওন সরকার, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শিহাব উদ্দিন, এসআই জাহাঙ্গীর বাদশা রনি, এএসআই সিরাজুল আওলাদ সুমনসহ বীরগঞ্জ থানার সব কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত মেম্বার আবু হানিফ স্থানীয় একটি ফেসবুক পেজে লাইভে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে ভাইরাল হন, যদিও তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নানা অপকর্ম ও হয়রানির অভিযোগ উঠে বিক্ষোভকারীদের ভাষণে।

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বীরগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগে মেম্বারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশের সময়: ০৫:৫০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস এবং ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আবু হানিফের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রকাশ্য বিরোধ ফের উত্তপ্ত রূপ নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের এক বৈঠকে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হলে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। পরে উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যস্থতায় আপোষ হলেও বিরোধে থাকা মেম্বার হানিফের মনে প্রতিহিংসার আগুন নেভেনি বলে স্থানীয়দের দাবি।

গতকাল ২৬ জুন ২০২৫ তারিখ সন্ধ্যার পর খলসী বাজার সংলগ্ন এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার পর এক উঠান বৈঠকে ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। বাবুল ও দুলুর জমি নিয়ে মাপজোখ ও দিনের বৈঠকের পর সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস উপস্থিত থাকাকালে মেম্বার আবু হানিফ তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। চেয়ারম্যানের সমর্থক মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে ফরিদ আলীসহ অন্যরা বাধা দিলে হানিফ পিছু হটতে বাধ্য হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই উত্তেজিত পরিস্থিতিতে মেম্বার হানিফের পক্ষে তার স্ত্রী রোজিনা ও ছেলে রাজিবুল ছাড়া কেউ দাঁড়ায়নি।

অভিযোগ আছে, হানিফ মেম্বার এলাকাবাসীর সহায়তায় চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করারও চেষ্টা চালান, তবে ব্যর্থ হন। পরে সংঘর্ষে চেয়ারম্যানের সমর্থক ফরিদ আলীকে মারধর করে তার পকেট থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসকে আটকে রেখে তার পকেট থেকে ৭৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। আহত ফরিদ আলী রাতেই বীরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা রেকর্ড করা হয়, যার নম্বর ২২।

রাতে পুলিশ অভিযুক্ত মেম্বার হানিফের বাড়িতে অভিযান চালালেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে ফেসবুক লাইভে আবু হানিফ দাবি করেন, পুলিশ তার বাড়ি ঘেরাও করেছিল—এই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়। বীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল গফুর ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শিহাব উদ্দিন বিষয়টি তদারকি করেন।

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিসের শত শত নেতাকর্মী-সমর্থক তার পাশে এসে জড়ো হন এবং তাকে উদ্ধার করে মিছিল সহকারে বীরগঞ্জ থানার সামনে এসে বিক্ষোভ করেন। তারা মেম্বার হানিফের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দেন। বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত জনতাকে শান্তনা ও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু, ফজলে আলম শাহীন, আলহাজ্ব তানভীর আহমেদ চৌধুরী, শাহজাহান সিরাজ শিপন, আরিফ মাসুম পল্লব, আব্দুল জব্বার প্রমুখ।

এ সময় বীরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাওন সরকার, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শিহাব উদ্দিন, এসআই জাহাঙ্গীর বাদশা রনি, এএসআই সিরাজুল আওলাদ সুমনসহ বীরগঞ্জ থানার সব কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত মেম্বার আবু হানিফ স্থানীয় একটি ফেসবুক পেজে লাইভে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে ভাইরাল হন, যদিও তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নানা অপকর্ম ও হয়রানির অভিযোগ উঠে বিক্ষোভকারীদের ভাষণে।