ঢাকা ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৮০ হাজার জাল ডলারসহ সাবেক মেম্বারসহ ৬ জন আটক

ডিএসবি ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়: ০৭:৪১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ ৮৭ জন পড়েছে

৮০ হাজার জাল ডলারসহ সাবেক মেম্বারসহ ৬ জন আটক

পঞ্চগড় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গোপন অভিযানে সংঘবদ্ধ জাল ডলার চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করা হয়েছে। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৮০ হাজার জাল মার্কিন ডলার, যা আন্তর্জাতিক মানেরভাবে ছাপানো এবং প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত ছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেবীগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ এলাকায় সমন্বিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হলেন মোজাম্মেল হক (৫৫), যিনি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘ডলার মোজাম্মেল মেম্বার’ নামে পরিচিত। যদিও তিনি একসময় জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, বাস্তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা, জালিয়াতি ও আর্থিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও তিনি রাজনৈতিক পরিচয়ের ছত্রছায়ায় বারবার আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে গেছেন।

বাকি আটককৃতরা হলেন-আনোয়ার হোসেন ডিপজল (৪২), দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠি হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের বাগদহ দিলালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও হামিদুল ইসলামের ছেলে। ইয়াসিন আলি (৩২), একই গ্রামের মইনুল ইসলামের ছেলে। সোহেল ইসলাম (৩৪), দিনাজপুর জেলার শতগ্রামের মৃত মফিজুল ইসলামের ছেলে। রমেশচন্দ্র বর্মন (৩৫), একই গ্রামের মৃত প্রভাতের ছেলে। হোসেন আলী বাবু (৩৬), পঞ্চগড় পৌরসভার ইসলামবাগ এলাকার সুলতা আলীর ছেলে।

এই জালিয়াত চক্র এতটাই পরিকল্পিতভাবে কাজ করত যে, তারা সাধারণ মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে ‘ডলার ব্যবসায়ী’ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করিয়ে তুলেছিল। অনেকে বাস্তব ডলারের সঙ্গে মিলিয়ে না দেখে বিশ্বাস করে প্রতারিতও হয়েছেন।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ বিস্মিত-একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি কীভাবে এমন ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন? তাদের প্রশ্ন, “জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে কেউ কীভাবে জনগণেরই সর্বনাশ করতে পারে?” এলাকার সচেতন মহল বলছে, এটি কোনো একক ঘটনা নয়; বরং এমন অনেকেই আছেন যারা রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে জাল নোট আইনে এবং প্রতারণা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া, তাদের আর্থিক লেনদেন, সম্পদের উৎস এবং অতীত কার্যকলাপ নিয়েও তদন্ত চলছে। চক্রটির সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না, তা বের করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এই অভিযান প্রমাণ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপই পারে সমাজের এসব বিষাক্ত উপাদানকে উপড়ে ফেলতে। এখন দেখার বিষয়-এই অপরাধীদের শুধু গ্রেপ্তার করলেই কি যথেষ্ট, নাকি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হবে?

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

৮০ হাজার জাল ডলারসহ সাবেক মেম্বারসহ ৬ জন আটক

প্রকাশের সময়: ০৭:৪১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

পঞ্চগড় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গোপন অভিযানে সংঘবদ্ধ জাল ডলার চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করা হয়েছে। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৮০ হাজার জাল মার্কিন ডলার, যা আন্তর্জাতিক মানেরভাবে ছাপানো এবং প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত ছিল। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেবীগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ এলাকায় সমন্বিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হলেন মোজাম্মেল হক (৫৫), যিনি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘ডলার মোজাম্মেল মেম্বার’ নামে পরিচিত। যদিও তিনি একসময় জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, বাস্তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা, জালিয়াতি ও আর্থিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও তিনি রাজনৈতিক পরিচয়ের ছত্রছায়ায় বারবার আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে গেছেন।

বাকি আটককৃতরা হলেন-আনোয়ার হোসেন ডিপজল (৪২), দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংঠি হাজরাডাঙ্গা ইউনিয়নের বাগদহ দিলালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও হামিদুল ইসলামের ছেলে। ইয়াসিন আলি (৩২), একই গ্রামের মইনুল ইসলামের ছেলে। সোহেল ইসলাম (৩৪), দিনাজপুর জেলার শতগ্রামের মৃত মফিজুল ইসলামের ছেলে। রমেশচন্দ্র বর্মন (৩৫), একই গ্রামের মৃত প্রভাতের ছেলে। হোসেন আলী বাবু (৩৬), পঞ্চগড় পৌরসভার ইসলামবাগ এলাকার সুলতা আলীর ছেলে।

এই জালিয়াত চক্র এতটাই পরিকল্পিতভাবে কাজ করত যে, তারা সাধারণ মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে ‘ডলার ব্যবসায়ী’ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করিয়ে তুলেছিল। অনেকে বাস্তব ডলারের সঙ্গে মিলিয়ে না দেখে বিশ্বাস করে প্রতারিতও হয়েছেন।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ বিস্মিত-একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি কীভাবে এমন ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন? তাদের প্রশ্ন, “জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে কেউ কীভাবে জনগণেরই সর্বনাশ করতে পারে?” এলাকার সচেতন মহল বলছে, এটি কোনো একক ঘটনা নয়; বরং এমন অনেকেই আছেন যারা রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আটককৃতদের বিরুদ্ধে জাল নোট আইনে এবং প্রতারণা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া, তাদের আর্থিক লেনদেন, সম্পদের উৎস এবং অতীত কার্যকলাপ নিয়েও তদন্ত চলছে। চক্রটির সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না, তা বের করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এই অভিযান প্রমাণ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপই পারে সমাজের এসব বিষাক্ত উপাদানকে উপড়ে ফেলতে। এখন দেখার বিষয়-এই অপরাধীদের শুধু গ্রেপ্তার করলেই কি যথেষ্ট, নাকি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হবে?