ছুটিতে না গিয়ে দায়িত্বে ইউএনও আলী সুজা: মোবাইল কোর্ট অভিযান ও জরিমানা

- প্রকাশের সময়: ১০:২৩:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫ ৬৩ জন পড়েছে
ঈদ-উল আযহার পর ঢাকামুখী যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে উজিরপুর উপজেলা প্রশাসনের এক অভাবনীয় ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ দেখা যায় ১১ জুন, বুধবার। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আলী সুজা।
সাধারণত ঈদের পরে দুর্বল প্রশাসনিক নজরদারির সুযোগ নিয়ে সড়কে দেখা যায় অনিয়ম, অতিরিক্ত ভাড়া, বিশৃঙ্খলা ও যানজট। কিন্তু এবার উজিরপুরে ছিল তার ব্যতিক্রম। মোবাইল কোর্ট অভিযানে হেলমেট ও প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মোটরসাইকেল চালানোর অপরাধে ৪ জনকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসাথে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়ার দায়ে দুটি বাসকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর বিভিন্ন ধারায় মোট ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এই অভিযান শুধু জরিমানা করেই থেমে থাকেনি। মহাসড়কে যানজট নিরসনে অন্যতম একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো টোলপ্লাজায় ধীরগতির টোল আদায়। এই বিষয়টি আমলে নিয়ে ইউএনও ইচলাদি টোলপ্লাজায় অতিরিক্ত টোল আদায়কারী নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেন, যাতে যানবাহনের লাইন কমে এবং সময়মতো যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।
আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক ছিল গণপরিবহণ কাউন্টারগুলোর অগোছালো কার্যক্রম। ইচলাদি এলাকায় অনেক কাউন্টার দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তার ওপর যাত্রী উঠা-নামার সুযোগ তৈরি করে যানজট ও জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ইউএনও কঠোর ভাষায় কাউন্টার মালিকদের সতর্ক করেন এবং ভবিষ্যতে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দেন।
পুরো অভিযানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে উজিরপুর মডেল থানার একটি চৌকস পুলিশ দল, যারা সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, কাগজপত্র যাচাই এবং পরিবহন শ্রমিকদের সহযোগিতায় নিরবিচারে কাজ করে যানজট মুক্ত রাখতে সহায়তা করেন।
সাধারণ মানুষ ও সচেতন নাগরিক সমাজ ইউএনও’র এই অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, “যেখানে অধিকাংশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ঈদের ছুটিতে অনুপস্থিত, সেখানে একজন কর্মকর্তা নিজের ছুটি বাতিল করে সড়কে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন—এটি সত্যিকার অর্থেই জনসেবার অনন্য নজির।”
বস্তুনিষ্ঠভাবে বলতে গেলে, পুরো ঈদ-পরবর্তী সময় উজিরপুরে ছিল প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে আবদ্ধ। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা বা যাত্রী হয়রানির খবর পাওয়া যায়নি। জনসাধারণের প্রত্যাশা, শুধু ঈদ নয়—সারা বছরজুড়ে এ রকম প্রশাসনিক সক্রিয়তা বজায় থাকলে সড়ক ব্যবস্থাপনা আরও মানবিক ও নিরাপদ হবে।