পুলিশের হাতে থাকবে না মারণাস্ত্র, র্যাব পুনর্গঠনে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

- প্রকাশের সময়: ১২:১১:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫ ১৫৪ জন পড়েছে
গত বছর জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন দমনে পুলিশের বেপরোয়া অস্ত্র ব্যবহারের কারণে জনগণের আস্থা হারানোয়, বাহিনীর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখন থেকে পুলিশের হাতে আর কোনো মারণাস্ত্র থাকবে না বলে জানানো হয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের নবম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, “পুলিশকে আর কোনো মারণাস্ত্র দেওয়া হবে না। বর্তমানে যা আছে, তাও জমা দিতে হবে। শুধুমাত্র আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে এসব অস্ত্র থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে। সাধারণ পুলিশের অপারেশনের জন্য মারণাস্ত্রের প্রয়োজন নেই। তবে রাইফেল বহাল থাকবে।”
সভায় র্যাব পুনর্গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়। উপদেষ্টা জানান, “র্যাবের নাম, পোশাক ও কাঠামো পরিবর্তন নিয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আবদুল হাফিজ এই কমিটির প্রধান এবং বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানগণ এতে সদস্য হিসেবে থাকছেন।”
সভায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল ভারত থেকে পুশ-ইনের মাধ্যমে লোকজনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া। উপদেষ্টা বলেন, “ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিকে জোর করে সীমান্তে পাঠানো হচ্ছে। বিজিবি মহাপরিচালক বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।”

বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানান, “গত ৭ ও ৮ মে তারিখে ২০২ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। তাদের মধ্যে অনেকে বহু বছর ধরে ভারতে ছিলেন এবং বৈধ পরিচয়পত্র ছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব রেখে দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ২০২ জনের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতে ইউএন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় ছিল। তাদের পুশইন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”
এছাড়াও খাগড়াছড়ি সীমান্তে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে পুশইনের চেষ্টা করছে বিএসএফ, কিন্তু বিজিবির টহলের কারণে তারা সফল হয়নি বলে জানান তিনি। অন্যদিকে সুন্দরবনের বান্দারবাড়িয়া চর থেকে একটি ভারতীয় জাহাজে করে ফেলে যাওয়া ৭৮ জনকেও উদ্ধার করে নিজ নিজ এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা চলছে।
সভায় ঈদের আগে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বেতন পাওয়ার যোগ্য শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে অবৈধ দাবিতে যারা সড়কে নামবে, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
তিনি জানান, এবারের কোরবানির হাটে প্রতি হাটে ১০০ জন আনসার সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। “ইজারাদারদের রাখা স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে, যেন চাঁদাবাজি বা ছিনতাই না ঘটে।”
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পশুবাহী ট্রাক যেন বাধাহীনভাবে চলাচল করতে পারে এবং কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।