রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বালুমহাল ইজারা ও মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা

- প্রকাশের সময়: ০৫:১১:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ৮৯ জন পড়েছে
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বালুমহাল ইজারা নিয়ে পলি মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, এ কারণে পদ্মা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। মাটি কাটার প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রদল নেতা মারধরের শিকার হয়েছেন। বর্তমানে গ্রামবাসী ও ইজারাদারের লোকজন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ফুলতলা ও প্রেমতলী-শেখেরপাড়া বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন মোখলেসুর রহমান মুকুল নামের একজন ব্যক্তি, যিনি রাজশাহী নগরের কাশিয়াডাঙ্গার বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি এ ছাড়া বিদিরপুরে আরেকটি অবৈধ ঘাটও খুলেছেন। এই তিনটি ঘাট থেকেই মাটি কেটে তীরের ক্ষতি করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও ইজারাদারের দাপট
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোখলেসুর রহমান মুকুল তালিকাভুক্ত হুন্ডি ব্যবসায়ী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি রাজশাহী-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। আসাদ নির্বাচিত হওয়ার পর মুকুল তাকে একটি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দেন এবং পরে আসাদের দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বালুমহালের ইজারা বাগিয়ে নেন।
বালুমহাল ইজারা পাওয়ার পর থেকেই তীরের মাটি কাটার কাজ শুরু হয়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব থাকায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট থেকে স্থানীয়রা মাটি কাটার প্রতিবাদ শুরু করেন। তারা ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দেন এবং মানববন্ধনের আয়োজন করেন।
ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা
গত ২৪ ডিসেম্বর মাটিকাটা ইউনিয়নে মাটি কাটার প্রতিবাদ করায় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক সাইফুদ্দিন টমাস মারধরের শিকার হন। বর্তমানে তিনি প্রেমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। টমাস জানান, বালুমহালের ইজারাদার মুকুলের ভাতিজা সাজিম ও তার সহযোগীরা তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী জেলা যুবদলের নেতা ফয়সাল সরকার ডিকোর নেতৃত্বেও তার ওপর হামলা হয়।
এ ঘটনায় টমাস অভিযোগ করেন, এলাকার মানুষের স্বার্থে মাটি কাটার প্রতিবাদ করলে তাকে হুমকি দেওয়া হয় এবং শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়। তবে যুবদল নেতা ফয়সাল সরকার ডিকো দাবি করেন, টমাস চাঁদাবাজির জন্য ফোন করেছিলেন এবং তার প্রতি করা অভিযোগ মিথ্যা।
গ্রামবাসীর প্রতিবাদ
মাটি কাটার প্রতিবাদে শেখেরপাড়া বালুমহালের সামনে স্থানীয়রা মানববন্ধনের আয়োজন করেন। তারা দাবি করেন, মাটি কাটা বন্ধ না হলে গ্রাম ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা আরও জানান, মাটি কাটার প্রতিবাদ করলেই ইজারাদারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়।
প্রশাসনের বক্তব্য
গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, “গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন যে, বালুমহালে মাটি কাটা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইজারাদার অভিযোগ করেছেন, কেউ কেউ চাঁদা না পেয়ে বালুমহাল বন্ধ করতে চাইছে। পরিস্থিতি জটিল। ইজারার মেয়াদ শেষ হলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে। গ্রামবাসীর আপত্তি থাকলে আর ইজারা দেওয়া হবে না।”
এই ঘটনা স্থানীয় জনগণ ও বালুমহাল ইজারাদারের মধ্যে বিরোধ আরও ঘনীভূত করেছে।