নদীভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং, বৃষ্টি উপক্ষো করে ইউএনও’র পরিদর্শন

- প্রকাশের সময়: ০৭:৩২:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫ ৭৬ জন পড়েছে
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বরাকোঠা ইউনিয়নের নাড়কেলী গ্রাম জুড়ে এখন আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার ছাপ স্পষ্ট। উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত সন্ধ্যা নদী নতুন করে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং জোয়ারের প্রবল চাপে নদীর স্রোত হয়েছে আরও তীব্র ও আগ্রাসী।
ফলশ্রুতিতে নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় নাড়কেলী গ্রামের বহু পরিবার এরইমধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়েছে। ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় অনেক কৃষক বিপাকে পড়েছেন। অসহায় মানুষের আর্তনাদ আর দুশ্চিন্তা যেন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিনই নদীর পাড় ভেঙে নতুন নতুন বাড়ি, গাছপালা আর জমি গিলে খাচ্ছে সন্ধ্যা নদী।
এই নদীভাঙন প্রতিরোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে। তবে এলাকাবাসীর মতে, নদীর প্রবল স্রোত ও পানির চাপের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং প্রয়াস চললেও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি।
এরই মধ্যে সোমবার থেকে টানা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। চারদিকে কাদা-পানি আর বৃষ্টির ঝাপটা উপেক্ষা করে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে নাড়কেলী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনে যান উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলী সুজা।
ভাঙনকবলিত নদীর পাড় ধরে তিনি হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখেন ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের সমস্যার খোঁজখবর নেন। অনেকে নদীপারের ত্রিপল টাঙানো অস্থায়ী শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন— ইউএনও আলী সুজা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান, সান্ত্বনা দেন। তিনি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সহায়তার আশ্বাস দেন এবং বলেন, “মানুষের কষ্ট লাঘবে যা যা দরকার, আমরা চেষ্টা করব।”
এ সময় ইউএনও-র সঙ্গে ছিলেন উজিরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস. এম. আলাউদ্দিন, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও বরাকোঠা ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারণ জনগণ। তারা নদীভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি, চলমান ড্যাম্পিং কাজের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করেন।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা ইউএনও আলী সুজার এই উদ্যোগকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। টানা বৃষ্টি ও দুর্যোগের মধ্যে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা নিজে উপস্থিত হয়ে মানুষের খবর নেয়ায় তারা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অনেকেই বলেন, “আমরা চাই প্রশাসন আমাদের পাশে থাকুক, এভাবে মাঠে নেমে আসুক— এটাই আমাদের সাহস যোগায়।”
প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবক দলগুলোও যেন এই দুর্যোগে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেয়, এমন প্রত্যাশা জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চললেও নদীর তীব্র স্রোত ও জোয়ারের কারণে স্থায়ী সমাধান নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। অনেকে বলছেন, “দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই নদীশাসন প্রকল্প ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না।”
নাড়কেলীর ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর চোখে এখনো ভয়, কিন্তু ইউএনও-র এই মানবিক উপস্থিতি তাদের মনে কিছুটা আশার আলোও জাগিয়েছে। দুর্যোগের মধ্যেও প্রশাসন ও জনগণ একসঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করে যাবে-এমনটাই প্রত্যাশা করছে পুরো উপজেলা।