৫৮ বছর পর মুক্তি পেল ইওয়া হাকামাতা

- প্রকাশের সময়: ১০:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০০ জন পড়েছে
জাপানের আদালত দীর্ঘতম সময় ধরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইওয়া হাকামাতাকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে, ৫৮ বছরের দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষ করে এই ঐতিহাসিক রায় প্রদান করা হয়। এই রায়ের মাধ্যমে জাপানের দীর্ঘস্থায়ী আইনি লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
প্রধান বিচারক কোশি কুনুই, রায় প্রদানকালে বলেন “ইওয়া হাকামাতা নির্দোষ। তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রমাণ হিসাবে দেখানো লাল দাগযুক্ত পোশাক তৈরি করেছিল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি জালিয়াতি করেছিল।” ন্যায়বিচার দিতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
৮৮ বছর বয়সী ইওয়া হাকামাতা এক সময় পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৬৮ সালে, তার কর্মস্থলের মালিক, মালিকের স্ত্রী এবং তাদের দুই কিশোর সন্তানকে হত্যার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে আদালত প্রমাণ পেয়েছে যে, হাকামাতার বিরুদ্ধে উপস্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলি জালিয়াতি করা হয়েছিল।
প্রথমে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেও, কয়েক দিনের জন্য প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চালানোর পর তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়। এই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর তিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় কারাগারের একটি ছোট ঘরে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন।
অপরাধের এক বছরেরও বেশি সময় পরে একটি পোশাক উদ্ধার করা হয়, যা হাকামাতার বিরুদ্ধে প্রধান প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। পোশাকে থাকা রক্তের দাগ তার অপরাধের সাথে সংযুক্ত বলে দাবি করা হয়েছিল। তবে, ২০১৪ সালে ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে, ওই রক্তের দাগ হাকামাতার ডিএনএর সঙ্গে মেলে না। এই তথ্যের ভিত্তিতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং পুনর্বিচারের সুযোগ দেওয়া হয়।
অবশেষে এ বছর আদালত নিশ্চিত করে যে, তার বিরুদ্ধে উপস্থাপিত প্রমাণগুলি জালিয়াতি করা হয়েছিল এবং তাকে সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।
হাকামাতার চার দশকেরও বেশি সময় কারাগারে থাকার ফলে তার মানসিক ও স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তিনি তার বড় বোন হিদেকোর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। ৯১ বছর বয়সী হিদেকো এখনও তার ভাইয়ের পাশে রয়েছেন এবং তার শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
হিদেকো বলেন, “কারাগারে এত দীর্ঘ সময় থাকার কারণে হাকামাতার মানসিক অবস্থা ভেঙে পড়েছিল। তাকে এক পশুর মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। আমি আর অতীত নিয়ে ভাবতে চাই না, আমি শুধু চাই আমার ভাই যেন শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে।”
শিজুওকার পুলিশ প্রধান তাকায়োশি সুদা সম্প্রতি হাকামাতার বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, “গত ৫৮ বছর ধরে আপনাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
হিদেকো শান্তভাবে উত্তর দেন, “আমরা বিশ্বাস করি এটি আমাদের ভাগ্যে ছিল। আমাদের এখন আর কোন কিছু নিয়ে অভিযোগ নেই।”
হাকামাতার মামলাটি জাপানের বিচার ব্যবস্থার গভীর সমস্যাগুলিকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে এবং এটি সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। জাপানে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের শুধুমাত্র ফাঁসির কয়েক ঘণ্টা আগে সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে নির্মম এবং অমানবিক।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই প্রক্রিয়াকে “নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অবমাননাকর” বলে অভিহিত করেছে এবং উল্লেখ করেছে যে, এটি বন্দিদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাকামাতার মতো ভুল বিচারের পুনরাবৃত্তি রোধে জাপানের বিচারব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য। তারা দাবি করেন, এই ঘটনার মাধ্যমে দেশের বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা আবারও স্পষ্ট হয়েছে।