টেন্ডার ছাড়াই ২১ কোটি টাকার কাজ করছিলেন যুবদল নেতা!

- প্রকাশের সময়: ০৬:৩০:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫ ২১৭ জন পড়েছে
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সংস্কার কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত ঘটনায় নগর ভবনের প্রকৌশল শাখায় অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে অংশ নেন দুদকের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদ সিদ্দীক এবং উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান। অভিযান শেষে দুদক জানায়, কাজের অর্ধেক ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বেশিরভাগ কাজের ঠিকাদার নির্বাচন সংক্রান্ত কাগজপত্র সিটি করপোরেশন দেখাতে পারেনি। যেসব কাগজ দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটি যাচাই করার জন্য দুদক যখন ঠিকাদারের মোবাইল নম্বরে ফোন করে, তখন তারা জানতে পারে যে নম্বরটি চাঁদপুরের এক ব্যক্তির এবং এটি কোনো ঠিকাদারের নয়।
এদিকে, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সিটি করপোরেশনে তাণ্ডব চালানো হয়, যার ফলে নগর ভবনে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং এতে ২১ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯ টাকার ক্ষতি হয়। সম্প্রতি এসব ক্ষতির পর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে, নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না।
জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকার বিএনপি নেতা ইয়াহিয়া খান মিলু বর্তমানে বেশিরভাগ সংস্কার কাজ পরিচালনা করছেন। ইতোমধ্যে নগর ভবনের রঙের কাজ শেষ হয়েছে এবং নতুন গ্লাস লাগানো হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করে মেয়রের দপ্তর সংস্কার করা হচ্ছে, তবে এই কাজের জন্য কোনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। ‘কোটেশন মেথোডে’ কাজ করার কথা বললেও নগর ভবন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুদক কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করার সময়, দীর্ঘ সময় ধরে তাদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে বসিয়ে রাখা হয়। পরে বিল দেওয়ার জন্য তিনটি কাজের কাগজপত্র উপস্থাপন করা হলেও, চলমান সাতটি কাজের কোনো কাগজপত্র সরবরাহ করতে পারেননি প্রধান প্রকৌশলী। এমন পরিস্থিতিতে কার্যাদেশ ছাড়া ঠিকাদার কীভাবে কাজ করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান শেষে, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানিয়েছেন যে, রাসিকের ২১ কোটি ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯ টাকার ক্ষয়ক্ষতির সংস্কার কাজ ছোট ছোট ভাগে করা হচ্ছিল। দুদক দল ফরিদা ইয়াসিমন, মাইসা এন্টারপ্রাইজ এবং শাহরিন এন্টারপ্রাইজ নামে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাগজ পেয়েছে। মাইসা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী হলেন ইয়াহিয়া খান মিলু, আর শাহরিন এন্টারপ্রাইজের কাগজপত্রে স্বত্ত্বাধিকারী হিসেবে এমএম মাহফুজুর রহমান নাম লেখা থাকলেও, মোবাইল নম্বরে ফোন করে দেখা গেছে, নম্বরটি তার নয় এবং চাঁদপুরের এক ব্যক্তি ফোন ধরেছেন, যিনি ঠিকাদার নন এবং কোনো দরপত্রে অংশও নেননি। শাহরিন এন্টারপ্রাইজ ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪০ টাকার কাজ করেছে।
দুদক কর্মকর্তা আমির হোসাইন বলেছেন, এই কাজের কাগজপত্র সম্ভবত জাল হতে পারে। তিনি জানান, কাজ পাওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যেমন স্বামী-স্ত্রী আলাদা নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। তাদের কাছাকাছি দর দাখিল করা হয়েছে এবং তারা কাজ পেয়েছে। পিপিআর অনুযায়ী, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ পাওয়ার কথা, কিন্তু এখানে সঠিক প্রতিযোগিতা হয়নি বলে দুদক মনে করছে।
তিনি আরো বলেন, সিটি করপোরেশন তিনটি কাজের কাগজপত্র দিলেও, সাতটি চলমান কাজের কাগজপত্র তারা সরবরাহ করতে পারেনি। এর মধ্যে কাজের অর্ধেক ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন বলেন, সব কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে করা হয়েছে এবং কোনো অনিয়ম হয়নি। দুদক তাদের মতো বক্তব্য দিয়েছে, কিন্তু সিটি করপোরেশন নিয়ম মেনে কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি।