কাল উদযাপিত হতে যাচ্ছে বড়দিন বা ক্রিসমাস

- প্রকাশের সময়: ১১:৪১:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০১ জন পড়েছে
খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আগামীকাল বুধবার। এই দিনটি যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন হিসেবে উদযাপন করা হয়, যিনি ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করেন।
বিশ্বাস করা হয় যে, প্রভু যিশু সৃষ্টি-কর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে পৃথিবীতে আগমন করেন।
বাংলাদেশেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যথাযথ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মাধ্যমে ‘শুভ বড়দিন’ উদযাপন করবেন।
এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের গির্জাগুলো নতুন করে সাজানো হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন গির্জা এবং হোটেলগুলোও আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
এদিকে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এই ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে আগামীকাল দুপুরে বঙ্গভবনে এক সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। দুপুর ১২টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি। তিনি একটি শুভেচ্ছাবাণীও প্রদান করবেন এবং দিবসটি উপলক্ষে একটি কেক কাটবেন। পরে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেবেন।
বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস খ্রিস্টধর্মাবলম্বীসহ সকলের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তাঁর বাণীতে বলেন, যীশুখ্রিষ্টের জন্মদিনটি বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং মর্যাদার সঙ্গে ‘বড়দিন’ হিসেবে উদযাপিত হয়। তিনি আরও বলেন, যীশুখ্রিষ্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত এবং আলোর দিশারি। তিনি সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও শান্তির বাণী প্রচার করে পৃথিবীকে শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করতে চান। সাহাবুদ্দিন বিশ্বাস করেন, যীশুখ্রিষ্টের শিক্ষা ও আদর্শ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন, এবং বর্তমান যুদ্ধ-বিগ্রহপূর্ণ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বাণীতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যীশুখ্রিষ্ট এই দিনে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, যা শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সম্ভব। মহামতি যীশু বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন, এবং তাঁর জীবনাচরণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলির কারণে তিনি মানব ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এদেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে মিলেমিশে বসবাস করছে। এখানে রয়েছে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস্ব ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা। বড়দিন দেশের খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ ও সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বড়দিন উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি ছুটি। অপরদিকে দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। এ ছাড়াও দেশের অনেক অঞ্চলে ধর্মীয় গানের আয়োজন করা হয়েছে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বড়দিনকে বেছে নেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে গিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে।
রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আলোক সজ্জার পাশাপাশি হোটেলের ভেতরে কৃত্রিমভাবে স্থাপন করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও শান্তাক্লজ। বড়দিনের প্রাক্কালে আজ মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনাও অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার সকাল থেকে শুরু হবে বড়দিনের প্রার্থনা।
এদিকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভ বড়দিন ও নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত আর্চ বিশপের হাউজ পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পরিদর্শনকালে তিনি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান।
সেনাপ্রধান এসময় বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব। তিনি আরও বলেন, সব সম্প্রদায়ের মানুষ যেন তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উদযাপন করতে পারে, সে বিষয়ে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে।
এছাড়া, তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, অন্যান্য সব সম্প্রদায়ের মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভ বড়দিন ও নববর্ষ উদযাপনে আন্তরিকতার সঙ্গে সহযোগিতা করবে। সেনাপ্রধান আশা প্রকাশ করেন যে, সবাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থেকে একে অপরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও উন্নত দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে।