ঢাকা ১২:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগৈলঝাড়ায় এক শ্রেণিকক্ষে ৬ শ্রেণির পাঠদান

আগৈলঝাড়া সংবাদদাতা
  • প্রকাশের সময়: ০৯:৪৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১২ জন পড়েছে

মাঝারি আকারের একটি ঘর। মোটা কাপড়ের বেড়া দিয়ে ভাগ করে সেখানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সঙ্গে একাধিক শ্রেণির পাঠ চলার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ পড়াশোনায় মনোযোগী নয়; হইচই আর নিজেদের মধ্যে কথা বলায় ব্যস্ত তারা।

গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পূর্ব গোয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি কক্ষে এভাবেই ক্লাস পরিচালনা হয়ে আসছে। তিন বছর আগে বিদ্যালয়ের পুরোনো টিনের শ্রেণিকক্ষগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ১ কোটি ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩২ টাকা বাজেটে দরপত্র আহ্বান করে এবং কাজের দায়িত্ব পায় সরদার এন্টারপ্রাইজ।

২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কার্যাদেশ দেওয়া হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক সাজ্জাদ হোসেন মিলু কাজ শুরু করেন সেই বছরের এপ্রিল মাসে। ৯ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও দেড় বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু কাজের ২০ শতাংশও শেষ হয়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তিনবার সময় বাড়ানোর আবেদন করে, সর্বশেষ সময় দেওয়া হয়েছে ২০২৫ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণে ভবন নির্মাণ এখনও প্রশ্নের মুখে।

বিদ্যালয় পরিদর্শনে দেখা গেছে, নতুন ভবনের জন্য পাইলিং ও গ্রেট বিম ঢালাই দিয়ে পিলার তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণকাজের উপকরণ ইট, পাথর, তক্তা বিদ্যালয় চত্বরে ফেলে রাখা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে বালু, পাথর, খোয়া, ইট, রড, কাঠ, ও বাঁশ। এসব জিনিসপত্রের কারণে শিক্ষার্থীদের চলাফেরা করতে অসুবিধা হচ্ছে। প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান এ দুর্ভোগের জন্য শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে।

শ্রাবণী ভদ্র ও জাহিদ বেপারি নামে দুই শিক্ষার্থী জানায়, আগে ভাঙাচোরা শ্রেণিকক্ষে ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হতো। নতুন ভবনের কথা শুনে আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন লাইব্রেরি কক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হয়। অনেক ক্লাস একসঙ্গে চলায় হৈ-হুল্লোড় লেগেই থাকে। ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া যায় না। এখানে পড়তে আমাদের ভালো লাগে না।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নাদিরা আফরিন বলেন, “ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য বলেছি।”

প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় গাইন বলেন, “ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ভবনের কাজ শেষ হচ্ছে না। প্রায় দেড় বছর ধরে ছয়টি শ্রেণির ১১৮ শিক্ষার্থীকে একটি মাত্র কক্ষে কাপড়ের বেড়া দিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। শিক্ষকদের বসার জন্যও জায়গা নেই। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার মান ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত জানান, ঠিকাদারকে বারবার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। সময়সীমা বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই কথা বলেন উপজেলা প্রকৌশলী রবীন্দ্র চক্রবর্তী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছরের ৩০ মার্চের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সরদার এন্টারপ্রাইজের মালিক সাজ্জাদ হোসেন মিলুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে অসুস্থতার কারণে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, প্রতিষ্ঠানের সাইট ঠিকাদার জয়দেব রায় জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম কম ছিল। পরে দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন

মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আগৈলঝাড়ায় এক শ্রেণিকক্ষে ৬ শ্রেণির পাঠদান

প্রকাশের সময়: ০৯:৪৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মাঝারি আকারের একটি ঘর। মোটা কাপড়ের বেড়া দিয়ে ভাগ করে সেখানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সঙ্গে একাধিক শ্রেণির পাঠ চলার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ পড়াশোনায় মনোযোগী নয়; হইচই আর নিজেদের মধ্যে কথা বলায় ব্যস্ত তারা।

গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পূর্ব গোয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি কক্ষে এভাবেই ক্লাস পরিচালনা হয়ে আসছে। তিন বছর আগে বিদ্যালয়ের পুরোনো টিনের শ্রেণিকক্ষগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ১ কোটি ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩২ টাকা বাজেটে দরপত্র আহ্বান করে এবং কাজের দায়িত্ব পায় সরদার এন্টারপ্রাইজ।

২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কার্যাদেশ দেওয়া হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক সাজ্জাদ হোসেন মিলু কাজ শুরু করেন সেই বছরের এপ্রিল মাসে। ৯ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও দেড় বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু কাজের ২০ শতাংশও শেষ হয়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তিনবার সময় বাড়ানোর আবেদন করে, সর্বশেষ সময় দেওয়া হয়েছে ২০২৫ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণে ভবন নির্মাণ এখনও প্রশ্নের মুখে।

বিদ্যালয় পরিদর্শনে দেখা গেছে, নতুন ভবনের জন্য পাইলিং ও গ্রেট বিম ঢালাই দিয়ে পিলার তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণকাজের উপকরণ ইট, পাথর, তক্তা বিদ্যালয় চত্বরে ফেলে রাখা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে বালু, পাথর, খোয়া, ইট, রড, কাঠ, ও বাঁশ। এসব জিনিসপত্রের কারণে শিক্ষার্থীদের চলাফেরা করতে অসুবিধা হচ্ছে। প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান এ দুর্ভোগের জন্য শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে।

শ্রাবণী ভদ্র ও জাহিদ বেপারি নামে দুই শিক্ষার্থী জানায়, আগে ভাঙাচোরা শ্রেণিকক্ষে ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হতো। নতুন ভবনের কথা শুনে আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন লাইব্রেরি কক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হয়। অনেক ক্লাস একসঙ্গে চলায় হৈ-হুল্লোড় লেগেই থাকে। ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া যায় না। এখানে পড়তে আমাদের ভালো লাগে না।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নাদিরা আফরিন বলেন, “ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য বলেছি।”

প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় গাইন বলেন, “ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ভবনের কাজ শেষ হচ্ছে না। প্রায় দেড় বছর ধরে ছয়টি শ্রেণির ১১৮ শিক্ষার্থীকে একটি মাত্র কক্ষে কাপড়ের বেড়া দিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। শিক্ষকদের বসার জন্যও জায়গা নেই। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার মান ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত জানান, ঠিকাদারকে বারবার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। সময়সীমা বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই কথা বলেন উপজেলা প্রকৌশলী রবীন্দ্র চক্রবর্তী। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছরের ৩০ মার্চের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে।

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সরদার এন্টারপ্রাইজের মালিক সাজ্জাদ হোসেন মিলুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে অসুস্থতার কারণে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, প্রতিষ্ঠানের সাইট ঠিকাদার জয়দেব রায় জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম কম ছিল। পরে দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে।